মিডল ইস্ট আই, রয়টার্স: ইসরাইলের নিন্দা জানিয়ে দেওয়া এক বিবৃতি প্রত্যাহার করতে মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমামকে দেশটির প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে চাপ দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই বিবৃতি প্রত্যাহার করা হয়। দুটি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য জানিয়েছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ক্ষুধায় রাখাকে ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে অনাহার’ চাপানো উল্লেখ করে ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছিল কায়রোভিত্তিক আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেটি সরাতে মিসরের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে আল-আজহারের প্রধান ইমাম আহমদ আল-তায়েবকে চাপ দেওয়া হয়েছিল।
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত বুধবার বলেছে, গাজায় অনাহারে থাকা ফিলিস্তিনিদের সংকট মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেওয়া কঠোর ভাষার বিবৃতিটি সরিয়ে ফেলেছে তারা। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, ওই বিবৃতি যুদ্ধবিরতি আলোচনার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আল-আজহার কর্তৃপক্ষ গত বুধবার বলেছে, গাজায় অনাহারে থাকা ফিলিস্তিনিদের সংকট মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেওয়া কঠোর ভাষার বিবৃতিটি সরিয়ে ফেলেছে তারা। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, ওই বিবৃতি ইসরায়েল হামাস যুদ্ধবিরতি আলোচনার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, গাজায় যুদ্ধবিরতিসংক্রান্ত চলমান আলোচনার ওপর বিবৃতিটির প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকায় তারা নিজেরাই তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। নিরপরাধ মানুষের জীবন রক্ষার কথা বিবেচনা করে এমনটা করা হয়েছে। আল-আজহার কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা গাজায় প্রতিদিনের রক্তপাত বন্ধ করাকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়। তাদের আশা, এ আলোচনার মাধ্যমে রক্তপাত দ্রুত বন্ধ হবে ও নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের জীবনধারণের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজনগুলো মিটবে।
কেন কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে? গাজাকে রক্ষার জন্য মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তোলার যে আহ্বান আল-আজহার জানিয়েছিল, সেই বিবৃতি মুছে ফেলাটা সম্পূর্ণ অন্যায্য...নীরবতা আর সহমতের এই সময়ে মানবতা আর ধর্মীয় বিবেকের কণ্ঠরোধ করার এক মরিয়া চেষ্টা এটি। ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়ে দেওয়া বিবৃতি গত মঙ্গলবার প্রকাশ করেছিল আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। আল-আজহার ও মিসরের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের দুটি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে বলেছে, বিবৃতিটি প্রকাশের কিছুক্ষণ পরই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির কার্যালয়ের অনুরোধে তা সরিয়ে ফেলা হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় ওই দুই সূত্র নাম প্রকাশে রাজি হয়নি। আল-আজহার কর্তৃপক্ষ গাজার ঘটনার জন্য তৃতীয় কিছু দেশকেও দায়ী করেছে। গাজা পরিস্থিতিকে ‘পুরোপুরি গণহত্যা’ বলে উল্লেখ করেছে তারা। ইসরায়েল নিয়ে আল-আজহার কর্তৃপক্ষের বিবৃতি দেওয়ার ঘটনা বিরল। আর গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে তারা আরও সতর্কভাবে কথা বলে আসছিল।
আল-আজহার কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা গাজায় প্রতিদিনের রক্তপাত বন্ধ করাকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়। তাদের আশা, এ আলোচনার মাধ্যমে রক্তপাত দ্রুত বন্ধ হবে ও নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের জীবনধারণের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজনগুলো মিটবে। ইসলামী সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল মুসলিম স্কলার্স ইউনিয়ন’ এর প্রধান আলী আল-কারদাগি বিবৃতি সরিয়ে ফেলার ঘটনাকে ‘অন্যায়’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে আল কারদাগি লিখেছেন, ‘কেন কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে? গাজাকে রক্ষার জন্য মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তোলার যে আহ্বান আল-আজহার জানিয়েছিল, সেই বিবৃতি মুছে ফেলাটা সম্পূর্ণ অন্যায্য...নীরবতা আর সহমতের এই সময়ে মানবতা আর ধর্মীয় বিবেকের কণ্ঠরোধ করার এক মরিয়া চেষ্টা এটি।’
এমন সময়ে বিবৃতিটি সরানো হলো, যখন নেদারল্যান্ডসের কয়েকজন অধিকারকর্মী দেশটিতে অবস্থিত মিসরের দূতাবাসের গেটে শিকল লাগিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। গাজার সঙ্গে মিসরের সীমান্ত বন্ধ করে রাখার প্রতিবাদ জানান তাঁরা। মিসরীয় অধিকারকর্মী আনাস হাবিব গত সোমবার হেগে অবস্থিত দূতাবাস ভবনের দিকে যাওয়ার একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। তিনি প্রেসিডেন্ট সিসির সরকারকে ‘নিষ্ঠুর ও প্রতারক’ বলে আখ্যা দেন। ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। এতে জাতিসংঘ ও সহযোগী সংস্থাগুলো গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে পারছে না। সেখানকার ২১ লাখ মানুষের জীবন এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় মার্চ থেকে এ পর্যন্ত অনাহারে মারা গেছেন অন্তত ১১৫ জন ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে ৮০টি শিশু। শুধু গত সোমবারই অপুষ্টিতে মারা গেছেন ১৫ জন।