চ্যানেল-১২, টাইমস অব ইসরাইল, আল জাজিরা : দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে চাপ দেন। কিন্তু তার এই চাপে যুবরাজ সরাসরি ‘না’ করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্ষুব্ধ ও হতাশ হন।

ইসরাইলী সংবাদমাধ্যম দুজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প ও মোহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যে সরাসরি বৈঠকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রথমে সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকরণ ইস্যুটি উত্থাপন করেন এবং যুবরাজকে এখন থেকেই এই কাজ শুরু করার আহ্বান জানান। জবাবে প্রিন্স সালমান বলেন, তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চান, কিন্তু এটি এখন সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, গাজায় ইসরায়েলের ‘দুই বছরের বেশি বর্বর যুদ্ধের’ পর সৌদিতে ইসরায়েল বিরোধী কঠোর অবস্থান রয়েছে। আলোচনার বেশিরভাগ অংশই শালীন থাকলেও, ইসরায়েলের সঙ্গে এখন সম্পর্ক গড়তে না চাওয়ায় ক্রাউন প্রিন্সের ওপর ট্রাম্প ক্ষুব্ধ ও হতাশ হন।

মার্কিন কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, যুবরাজ বিন সালমান বৈঠকে একবারও বলেননি তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়বেন না; তিনি এক্ষেত্রে ভবিষ্যতের জন্য দরজা খোলা রেখেছেন। তবে এই পথে দ্বি-রাষ্ট্র এক বিশাল সমস্যা। এদিকে, সৌদির দূতাবাসের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে চ্যানেল-১২-কে তারা কোনো জবাব দেয়নি। অপরদিকে, হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশকেই আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

এক বছরে উচ্ছেদ ৩২ হাজার ফিলিস্তিনি : গাজার মতোই ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে ঘারছাড়া করছে দখলদার ইসরাইলি। শুধুমাত্র এ বছরই পশ্চিম তীরের তিনটি শরণার্থী শিবির থেকে ৩২ হাজার ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। এতে আরও বলা হয়, জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া জেনিন, নুর শামস ও তুলকারেম শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি অভিযানের ফলে ১৯৬৭ সালের পর পশ্চিমতীরে এটি সবচেয়ে বড় গণউচ্ছেদ। ইসরাইলি সহিংসতা পশ্চিম তীরে দ্রুত বেড়েই চলেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ইসরাইলিদের হাতে এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অবৈধ ইসরাইলি বসতি থেকে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলাও ক্রমশ বেড়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের সি অঞ্চলে নভেম্বরের শুরুর দিকে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বাড়িঘর ভেঙে দেওয়ায় আরও এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমেও পাঁচ শতাধিক মানুষ গৃহহীন হয়েছেন।

ইসরাইল অনুমতি না থাকার অজুহাতে এসব ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছে, যদিও এসব এলাকায় ফিলিস্তিনিদের জন্য নির্মাণের অনুমতি পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। এসব ঘটনার পরও অধিকৃত পশ্চিম তীরে নিজেদের কার্যকলাপের জন্য ইসরাইল এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো পরিণতির মুখোমুখি হয়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর কর্মকা- এবং সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের ঘটনাগুলোর জন্য ইসরাইলি সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।