ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ফের ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। একদিনেই সেখানে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭৬ জন ফিলিস্তিনী। গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শরণার্থী শিবির সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, শুধু সেখানেই নিহত হয়েছেন ৫০ জনেরও বেশি মানুষ। খবরে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার এই বিমান হামলার ভয়াবহতা আরও একবার বিশ্বের মানবতাবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৮৫ জন। তবে নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ অনেকেই ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে আছেন। তাদেরকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। শুক্রবারের অভিযানের পর গত দেড় বছরে উপত্যকায় মোট নিহত ও আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে যথাক্রমে ৫৩ হাজার ৮২২ জন এবং ১ লাখ ২২ হাজার ৩৮২ জনে। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। রয়টার্স, সৌদী গেজেট।
ফিলিস্তিনের ১,০০০ শহীদ পরিবারের
সদস্য হজে¦¦ যাচ্ছেন সৌদী খরচে
সৌদী বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের আমন্ত্রণে বিশ্বের ১০০টি দেশের ১ হাজার ৩০০ জন মুসল্লি এবারের হজে¦¦ অংশ নিতে যাচ্ছেন। মুসল্লিদের বিশেষ অতিথি হিসেবে এই হজে¦র আয়োজন করা হচ্ছে সৌদী সরকারের পক্ষ থেকে। দুই পবিত্র মসজিদের অভিভাবক হিসেবে বাদশাহ সালমান মুসল্লিদের জন্য এই বিশেষ ব্যবস্থার নির্দেশ দেন। আলাদাভাবে এক হাজার ফিলিস্তিনীকেও হজ¦ করাবে সৌদী সরকার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ, আহত ও বন্দি পরিবারের ১ হাজার সদস্যকে হজ¦ করাবেন সৌদী বাদশাহ। এদের হজে¦র সব ব্যয় বহন করবেন তিনি ব্যক্তিগতভাবে। সৌদি বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়, দেশটির ইসলাম ও দাওয়াহ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ‘হজ¦ গেস্ট প্রোগ্রাম’-এর আওতায় এই ফিলিস্তিনীদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী ড. আবদুল লতিফ আলে শায়েখ বলেন, ‘প্রতি বছর সৌদী সরকারের অর্থায়নে নির্দিষ্ট সংখ্যক ফিলিস্তিনীকে হজে¦ পাঠানো হয়। ফিলিস্তিনীদের আত্মত্যাগের প্রতি সহানুভূতির অংশ হিসেবে এবার বিশেষভাবে ১ হাজার জনকে হজে¦ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ এই উদ্যোগের প্রশংসা করে ফিলিস্তিনের ধর্ম ও আওকাফ বিষয়ক মন্ত্রী হাতিম আল-বাকারি বলেন, সৌদি আরব বরাবরই ফিলিস্তিনীদের পাশে রয়েছে। শহীদ, আহত ও বন্দী পরিবারের সদস্যদের হজে¦ পাঠানোর সিদ্ধান্ত তাদের মনোবল দৃঢ় করবে এবং ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে সৌদীর অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে।
ইসরাইলে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র
বিক্রি বন্ধের দাবিতে লন্ডনে
বিক্ষোভ
গাজায় চলমান সংঘাতের মধ্যে ইসরাইলের কাছে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র রফতানি বন্ধের দাবিতে লন্ডনের ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে গত শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকালে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হন। ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন’ (পিএসসি) আয়োজিত এই বিক্ষোভ থেকে ইসরাইলী পদক্ষেপের নিন্দা জানানো হয় এবং ফিলিস্তিনীদের দুর্ভোগে যুক্তরাজ্য জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়। এই বিক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি-এর সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর অনুষ্ঠিত হলো, যেখানে তারা গাজায় ইসরাইলের পদক্ষেপকে ‘জঘন্য’ এবং ফিলিস্তিনীদের দুর্ভোগকে ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে, বিক্ষোভকারীরা যুক্তি দিচ্ছেন, কেবল কথা যথেষ্ট নয় বরং তারা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, বিশেষ করে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষাবিদ এবং সাংবাদিক জন রিজ জনসমক্ষে বক্তব্য রাখেন এবং বলেন, ‘আমরা দাবি করি যে, তারা তাদের কথাকে কাজে পরিণত করুন। ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করুন।’ পিএসসি এই মনোভাবের প্রতিধ্বনি করে ‘ফিলিস্তিনী জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের গণহত্যার জড়িত থাকা বন্ধে সরকারের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ’ এর আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের অস্ত্র বিক্রি তদন্তাধীন: ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য ইসরাইলের কাছে অস্ত্র রফতানির লাইসেন্স অনুমোদন অব্যাহত রেখেছে, যার মধ্যে সংঘাতে ব্যবহৃত মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশও রয়েছে। যদিও সরকার ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে কিছু অস্ত্র রফতানির লাইসেন্স আংশিকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছিল, সমালোচকরা উল্লেখ করেছেন যে, ইসরাইলে অস্ত্রের সামগ্রিক সরবরাহ আসলে বৃদ্ধি পেয়েছে। র্যালিতে উপস্থিত থেকে সাবেক লেবার নেতা জেরেমি চরবিন সরকারি বক্তব্য ও নীতির মধ্যকার বিরোধ তুলে ধরেন। তিনি ৪ জুন হাউস অব কমন্সে গাজা (স্বাধীন জনতদন্ত) বিল পেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যার মাধ্যমে গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধে যুক্তরাজ্যের জড়িত থাকার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত চাওয়া হবে।
কেন যুক্তরাজ্য ইসরাইলকে সমর্থন ও অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছে?
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা সত্ত্বেও কেন যুক্তরাজ্য ইসরাইলকে সমর্থন ও অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছে, সেই প্রশ্নের উত্তর জটিল। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের অবস্থান বেশ কয়েকটি কারণের সমন্বয়ে প্রভাবিত। যুক্তরাজ্য এবং ইসরাইলের মধ্যে নিরাপত্তা, গোয়েন্দা এবং কূটনৈতিক বিষয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। আর অস্ত্র ব্যবসা যুক্তরাজ্যের জন্য আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস এবং ইসরাইল একটি বড় গ্রাহক। বিক্ষোভকারীরা তাদের প্রচারাভিযান চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করায়, যুক্তরাজ্য সরকার তার কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। আইনি চ্যালেঞ্জ এবং জনবিক্ষোভ ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক এবং চলমান সংঘাতে এর ভূমিকা সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান তদন্তকে তুলে ধরছে।