সারা বিশ্বের মুসলমানরা যখন ঈদুল আজহা পালনের প্রস্তুতি নিচেছ তখন গাজাবাসীকে লড়তে হচ্ছে প্রাণ বাঁচাতে। বিশ্ববাসী তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর একটি জনপদকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টায় নিয়োজিত নেতানিয়াহুর প্রশাসন। ঈদ নেই ফিলিস্তিনের যুদ্ধ বিক্ষত গাজায়। ধ্বংস হয়ে যাওয়া গাজাবাসীর ঘরে ঘরে, আশ্রয় কেন্দ্রের তাঁবুতে তাঁবুতে কান্না। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসন ৬০০ দিন অতিক্রম করেছে আর কার্যত সেখানে কেয়ামত নেমে এসেছে। গাজায় মঙ্গলবারও ৪০ জন নিহত হয়েছে। ২৩ লাখ লোকের এ জনপদে নিহতের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৫৫ হাজার। বিশ্লেষকরা প্রশ্ন রেখেছেন ইসরাইলের রক্ততৃষ্ণা কবে থামবে? আল-জাজিরা, আনাদুলু।
আল জাজিরায় এক বিশ্লেষক লিখেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্ধকারতম দিনগুলিতে অ্যান ফ্রাঙ্ক এবং তার পরিবার নাৎসি নির্যাতনের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে আমস্টারডামের একটি গোপন কক্ষে লুকিয়ে ছিলেন। তার মরণোত্তর প্রকাশিত ডায়েরি বিশ্বকে সেই সময়ে ইহুদি পরিবারগুলোর ভয় এবং মানসিক আঘাতের এক ভুতুড়ে আভাস দিয়েছে। আজ ফিলিস্তিনে একটি করুণভাবে পরিচিত গল্প উন্মোচিত হচ্ছে। এবার অ্যান ফ্রাঙ্কের মতো শিশুরা - যাদের সংখ্যা হাজার হাজার, ইসরাইলি সরকারের সৃষ্ট অনাহার এবং অবিরাম বোমাবর্ষণের কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে। তাদের লুকানোর জন্য একটি কক্ষও নেই; নির্বিচারে ইসরাইলি আক্রমণে তাদের চারপাশের ভবনগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
৩ জুন গাজার ত্রাণকেন্দ্রে আবারো ইসরায়েলের গুলিতে ২৭ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এটি ত্রাণ কেন্দ্রে গুলির দ্বিতীয় প্রাণঘাতী ঘটনা। এই হত্যার ঘটনায় ইসরাইলের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস।
৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে হামাসের যোদ্ধারা ইসরাইলে আক্রমণ করে, যার ফলে ১,১৪৩ জন (বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিক) নিহত হয় এবং গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরাইল গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা চালিয়ে গাজাকে বলতে গেলে ধ্বংসস্তপে পরিণত করে। এত দিন যুদ্ধের পরও গাজায় ইসরাইল কেন বিজয়ী হতে পারেনি সেই বিশ্লেষণ করেছেন কেউ কেউ। প্রশ্ন তুলছেন এত দিন ধরে গাজায় নির্বিচার ব্যাপক বিমান ও স্থল হামলা চালানোর পরও কেন ইসরাইল সফল হতে পারছে না? তাদের মতে নেতানিয়াহুর ‘নাৎসিসদৃশ’ জায়নবাদী সরকার যুদ্ধের যে তিন মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, সেগুলোর কোনোটিই এখনো অর্জিত হয়নি। তার কারণ ফিলিস্তিনীদের অদম্য মনোবল আর প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রতিরোধ্য লড়াই।
১ জুন মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আবদেলআত্তি বলেছেন, গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধে মিসর তার সর্বোচ্চ কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কায়রোতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা গাজা যুদ্ধ বন্ধে আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে চাপ প্রয়োগ করছি।
আমরা আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব গাজায় রক্তপাত বন্ধে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবো। আবদেলআত্তি আরও বলেন, গাজার মানুষের জন্য পূর্ণ ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকারের এখনই জরুরি প্রয়োজন। ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। তিনি জানান, ইসরাইল গত ২ মার্চ থেকে গাজার সব সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে রেখেছে, ফলে ২৩ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও অন্যান্য জরুরি পণ্য সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় খুব একটা আশার ্আলো দেখছেন না। তারা মনে করেন এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও কিছু করা উচিৎ। সে দিকেই সবার নজর।