রয়টার্স , প্রেস টিভি: নেতানিয়াহু ১৯৯২ সাল থেকে এটা তুলে ধরার চেষ্টা করছে যে- ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ষষ্ঠ দফা বৈঠকের আগে যখন আমরা কার্যত আলোচনার মধ্যেই ছিলাম তখন আমেরিকা বাস্তবিক অর্থে আলোচনার টেবিলে বোমা মেরে কূটনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। আমেরিকার সাংবাদিক টাকার কার্লসনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি এ সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সাথে সহযোগিতা, ইসরাইলের সাথে সাম্প্রতিক যুদ্ধ এবং আমেরিকার সাথে সম্ভাব্য আলোচনা পুনরায় শুরু করার ক্ষেত্রে ইরানের শর্তাবলী সম্পর্কে তার সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। সাম্প্রতিক যুদ্ধ সম্পর্কে পেজেশকিয়ান বলেছৈন, ‘আমরা যুদ্ধ শুরু করিনি এবং আমরা এটি চালিয়েও যেতে চাই না। আমি যেদিন থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, সেদিন থেকে আমার মূলনীতি ছিল দেশের ভেতরে ঐক্য গড়ে তোলা এবং আমাদের প্রতিবেশী তথা গোটা বিশ্বের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা।
ইরানের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে প্রেসিডেন্ট বলেন, বাস্তবতা হলো নেতানিয়াহু ১৯৯২ সাল থেকে এটা তুলে ধরার চেষ্টা করছে যে- ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় আসা প্রত্যেক প্রেসিডেন্টের মাথাতেও এই একই জিনিস ঢোকানোর চেষ্টা করেছে। তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের মাথার মধ্যে এই মিথ্যাটি স্থাপন করার চেষ্টা করেছেন যে- ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টায় আছে। তিনি আরো বলেন, আমরা কোনোভাবেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চাইনি, এখনো চাচ্ছি না এবং ভবিষ্যতেও তা করব না। এটা সর্বোচ্চ নেতার আদেশ এবং ফতোয়া। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সাথে আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা করেছি, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তাদের আচরণের কারণে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। পেজেশকিয়ান বলেন, যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠার পর আবারো আলোচনা সম্ভব হতে পারে, তবে আলোচনা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে একটি শর্ত হলো আলোচনা প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা-বিশ্বাস তৈরি করা।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ : ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের বিরোধ আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সহজেই সমাধান করা সম্ভব। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি হামলার পর দুপক্ষের মধ্যে আস্থার বিষয়টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। গত শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার নেন যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল পডকাস্টার টাকর কার্লসন। সাক্ষাৎকারটি সোমবার প্রকাশ করা হয়। কার্লসনকে পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব ও বিরোধ খুব সহজেই আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।’
তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্ররোচনায় ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়েন। সোমবার হোয়াইট হাউজে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন সফর করছেন নেতানিয়াহু। পেজেশকিয়ান বলেন, ‘এই অঞ্চলকে শান্তি ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিতে এবং ইসরায়েলকে তার যথাস্থানে ফিরিয়ে দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যথেষ্ট সক্ষম। নতুবা তিনি নিজেই এক অগভীর অথচ অন্তহীন খাদে, এক কর্দমাক্ত জলাভূমিতে পড়ে যেতে পারেন। সিদ্ধান্তটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাতে।’ হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট জানান, তিনি নিশ্চিত নন ট্রাম্প ইরানি প্রেসিডেন্টের মন্তব্য দেখেছেন কিনা। তবে তিনি একমত যে ট্রাম্পই এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সঠিক ব্যক্তি।
সাক্ষাৎকারে পেজেশকিয়ান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনাগুলো ভেঙে দিয়েছে ইসরায়েল। কারণ ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে বিমান হামলা শুরু করে, যা ১২ দিনের এক বিস্তৃত আকাশযুদ্ধে গড়ায়। এতে ইরানের শীর্ষ সেনা কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হন।’ ‘আমরা কীভাবে আবারও যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করব?’ পেজেশকিয়ান প্রশ্ন তোলেন। ‘আমরা কীভাবে নিশ্চিত হবো, আলোচনার মাঝপথে ইসরায়েলকে আবারও আমাদের ওপর হামলার অনুমতি দেওয়া হবে না?’