ফিলিস্তিনের দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে ক্ষুধার্ত বেসামরিক নাগরিকদের ভিড়ে গুলী চালিয়েছে ইসরাইলী সেনাবাহিনী। এতে কমপক্ষে ২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৭০ জনেরও বেশি আহত হন। গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকায় ফিলিস্তিনিরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল-সমর্থিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে খাদ্যের সন্ধানে জড়ো হয়েছিল। সেখানে ইসরাইলী সেনাবাহিনী জনতার ওপর গুলী চালায়। যার ফলে বিপুল সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানগুলোতে মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলী বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এদের পাশাপাশি আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি। ওয়াফা, আনাদুলো এজেন্সি, রয়টার্স, আল-জাজিরা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলী ভূখ-ে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলী চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা। হামাসের সেই হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলী সেনাবাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরাইল। কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত আড়াই মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ৮৪৩ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২৭ হাজার ৯৯৩ জন যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন এখনও জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করার ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ।
গাজায় মোট প্রাণহানি ছাড়াল ৫৮ হাজার ৬৬০
গত শুক্রবার দিনভর ইসরাইলী বিমান বাহিনীর গোলাবর্ষণে ফিলিস্তিনের গাজার উপত্যকায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৪১ জন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১১০ জন। গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবারের পর ইসরাইলী বাহিনীর অভিযানে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৮ হাজার ৬৬৭ জনে। এদের পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৪ জন ফিলিস্তিনি। ২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখ-ে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলী চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা। হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলী বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরাইল।
কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত আড়াই মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ৮৪৩ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২৭ হাজার ৯৯৩ জন। যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন এখনও জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করার ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।
ফিলিস্তিনিদের ভেড়াগুলোকেও হত্যা করছে ইসরাইলীরা
ইসরাইলীদের বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না ফিলিস্তিনিদের ভেড়াগুলোও। ইহুদিবাদী অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের ভেড়াগুলোকেও হত্যা করছে। গত শুক্রবার ইসরাইলী বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে রাতভর আক্রমণে ১১৭টি ভেড়া হত্যা এবং শত শত ভেড়া চুরির অভিযোগ এনেছে ফিলিস্তিনি বেদুইনরা। এটি অধিকৃত পশ্চিম তীরে কৃষকদের তাদের জমি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা বলে প্রতিবেদনে দাবি করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা ।
জাতিসংঘ চলতি সপ্তাহে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইহুদি বসতি স্থাপনকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনী তীব্র আক্রমণ চালাচ্ছে। জর্ডান উপত্যকায় আরব আল-কাবানেহ বেদুইন সম্প্রদায়ের পশুদের ব্যাপক হত্যা সম্পর্কে মন্তব্য করার অনুরোধের জবাব দেয়নি ইসরাইলী সেনাবাহিনী। আরাব আল-কাবানেহের বাসিন্দা সালেম সালমান মুজাহিদ জানিয়েছেন, বসতি স্থাপনকারীরা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে সমন্বিতভাবে আক্রমণটি পরিচালনা করেছে। এসময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পাশে দাঁড়িয়েছিল। তিনি বলেন, “(বসতি স্থাপনকারীরা) বাড়ির কাছে এসেছিল। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম- তোমরা এখানে কী করছো? তারপর আমরা একে অপরের সাথে লড়াই শুরু করি। সেনাবাহিনী আমাকে আটক করে এবং তারা আমাকে হাতকড়া পরিয়ে দেয়।” তিনি জানান, বসতি স্থাপনকারীদের অন্যান্য দল তখন ভেড়াগুলোর ওপর আক্রমণ চালায়।
ফিলিস্তিনি মন্ত্রী মোয়াদ শাবান এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি এই অঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ। তিনি বলেন, “এই ভেড়া ও পশুগুলোকে হত্যা করা হয়েছে এবং গুলি করা হয়েছে। তারা (ইহুদিরা) এই সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করে লোকদের ভয় দেখানোর জন্য যাতে এলাকাগুলো ছেড়ে চলে যায়।
কেন ইসরাইলী সেনাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে?
সম্প্রতি ইসরাইলী সেনাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। ইসরাইলের পাবলিক ব্রডকাস্টার ক্যান সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে সৈন্যদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার সংশ্লিষ্ট একজন অ্যাডভোকেট জাচি আতেদাগি বলেছেন, দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ ইসরাইলী সেনা আত্মহত্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, অনেক হয়েছে! সড়কে অনেক প্রবীণ সেনাকে দেখা যায়। তবে চারপাশের আমলাতন্ত্রের কারণে তাদের কাছে পর্যাপ্ত সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তিনি আরও বলেছেন, কখনও কখনও ওই সব প্রবীণ যোদ্ধাদের কাছে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করার মতো সময় থাকে না। অনেকে সরকারের কাছ থেকে চিকিৎসাসেবার অপেক্ষায় থাকার পর তা না পেয়ে আত্মহত্যা করেন।
এ সপ্তাহের শুরুতে টাইমস অব ইসরাইলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে প্রশিক্ষণে থাকা অবস্থায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এক সেনা। এতে তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসরাইলী সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ২৮ সেনা আত্মহত্যা করেছে, যা বিগত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।