রয়টার্স: গাজায় ত্রাণ প্রবেশে অবরোধের কারণে সেখানে মানবসৃষ্ট গণদুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস। গত বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টেড্রোস বলেন, ‘আমি জানি না একে আর কী বলা যায় এটা গণদুর্ভিক্ষ, এবং এটি মানবসৃষ্ট এবং সেটা অত্যন্ত স্পষ্ট। এই পরিস্থিতি অবরোধের কারণেই হয়েছে।’ সংবাদ সম্মেলনটি জেনেভা থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তার এই মন্তব্য এমন সময়ে এলো যখন শতাধিক আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা গাজায় চরম খাদ্যসংকট নিয়ে সতর্কতা জানায়। অথচ টনকে টন খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ গাজার ঠিক বাইরে অপ্রবেশযোগ্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত অপুষ্টির কারণে অন্তত ২১ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছেএই সংখ্যা ‘বরফের চূড়ামাত্র’, আসল সংখ্যাটা অনেক বড় হতে পারে। ডব্লিউএইচও আরও জানিয়েছে, অপুষ্টি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো পূর্ণ, অথচ জরুরি খাদ্য সরবরাহের জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত সামগ্রী নেই। ত্রাণ সরবরাহের চেইন ভেঙে পড়া ও প্রবেশে বাধার কারণে এই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। টেড্রোস জানান, জাতিসংঘ ও তাদের সহযোগী সংস্থাগুলো মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে প্রায় ৮০ দিন কোনও খাদ্য সরবরাহই করতে পারেনি এবং এখন যে সরবরাহ শুরু হয়েছে, সেটিও যথেষ্ট নয়। ডব্লিউএইচও এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা বলেন, পরিস্থিতি চরম সংকটজনক। তাদের স্ক্রিনিংয়ে দেখা গেছে, প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ মারাত্মক বা মাঝারি মাত্রার অপুষ্টিতে ভুগছেন এবং ২০ শতাংশ পর্যন্ত গর্ভবতী নারীও অপুষ্টির শিকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফিলিস্তিনি অধিকৃত অঞ্চলের প্রতিনিধি রিক পেপারকর্ন জানান, শুধুমাত্র জুলাই মাসেই ৫,১০০ শিশু অপুষ্টি নিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ জন মারাত্মক কৃশকায় অবস্থায় ছিল।
অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। মে মাসে অবরোধ আংশিকভাবে তুলে নেওয়া হলেও, সেখানে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। কারণ হিসেবে ইসরায়েল বলছেÍসন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে ত্রাণ চলে যাওয়া রোধ করতে এই নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর মতে, গাজার জনগণের প্রয়োজনের সামান্য অংশই সেখানে পৌঁছাতে পারছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা গাজায় যথেষ্ট ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে এবং সেখানে যে মানবিক বিপর্যয় চলছে, তার জন্য তারা হামাসকে দায়ী করে। এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত রাতেই ক্ষুধার কারণে আরও ১০ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১১ জনে। এদের অধিকাংশই সম্প্রতি চরম অনাহারে মারা গেছেন।