ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলী হামলায় আরও ৫১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৬৯ জন। এর মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলী আগ্রাসনে উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬১ হাজার ৮২৭ জনে দাঁড়াল। গত শুক্রবার ১৫ আগস্ট এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আনাদুলো, এএফপি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় ৫১ জন নিহত এবং ৩৬৯ জন আহত হয়েছে। যার ফলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলী আগ্রাসনে আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রণালয় অনাহার ও অপুষ্টির কারণে এক তরুণীর মৃত্যুর খবরও জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ইসরাইলী অবরোধের ফলে সৃষ্ট অনাহারে মৃত্যুর মোট সংখ্যা এখন ২৪০ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১০৭টি শিশুও রয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরাইলী বাহিনী মানবিক সাহায্য পেতে যাওয়া ফিলিস্তিনীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। গত একদিনেই ১৭ জন নিহত এবং ২৫০ জন আহত হয়েছে। ২৭ মে থেকে মানবিক সাহায্য নিতে যাওয়া ১ হাজার ৮৯৮ জন ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছে ইসরাইল। আর আহত হয়েছে ১৪ হাজার ১১৩ জন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলী ভূখ-ে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের যোদ্ধারা। এদিন ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।
হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলী বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ।
এছাড়া গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পাশাপাশি উপত্যকাটিতে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও রয়েছে ইসরাইল।
নেতানিয়াহু নিজেই একটি সমস্যা হয়ে উঠেছেন : ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী
ইউরোপের দেশ ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন বলেছেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বর্তমানে নিজেই এক সমস্যা হয়ে উঠেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সভাপতি হওয়ায় গাজা যুদ্ধের অবসানে ইসরাইলের ওপর ডেনমার্ক চাপপ্রয়োগের চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল শনিবার ডেনমার্কের দৈনিক জিল্যান্ডস-পোস্টেনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন মেটে ফ্রেডেরিকসেন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের নেতা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এখন ‘‘নিজেই একটি সমস্যা’’ হয়ে উঠেছেন। তার দেশ বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সভাপতি থাকা অবস্থায় গাজা যুদ্ধ অবসানে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ডেনমার্কের মধ্য-ডানপন্থী এই নেতা গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে ‘‘একেবারে ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্মক’’ বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে পশ্চিম তীরে ইসরাইলের নতুন বসতি স্থাপনের প্রকল্পের কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি।
ফ্রেডেরিকসেন বলেন, ‘‘আমরা এমন একটি দেশ, যারা ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়াতে চায়। কিন্তু এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের ইইউ সদস্য দেশগুলোর সমর্থন পাওয়া যায়নি।’’ ডেনমার্কের এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ইসরাইলের বসতিস্থাপনকারী, মন্ত্রী অথবা পুরো ইসরাইলের ওপর রাজনৈতিক চাপ, এমনকি নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপ বিবেচনা করতে পারেন। ইসরাইলের বাণিজ্য অথবা গবেষণার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ফ্রেডেরিকসেন বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও কিছু আগেভাগে বাতিল করছি না। যেমন রাশিয়ার ক্ষেত্রে, আমরা এমনভাবে নিষেধাজ্ঞা তৈরি করছি; যা আমাদের বিশ্বাসে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলবে।’’ তিনি বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে ডেনমার্ক এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সদস্যরা ইসরাইলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২১৯ জনকে হত্যা করেন। এর জবাবে সেদিনই গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরাইলী সামরিক বাহিনী। গাজায় ইসরাইলের এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৪৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন।