ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত রোববার এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরাইলী বাহিনী। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির পার্লামেন্ট নেসেটে নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন। নেসেটের সদস্যদের উদ্দেশে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমাদের এক হাতে অস্ত্র, অন্য হাত শান্তির জন্য প্রসারিত। দুর্বলের সঙ্গে নয়, শক্তিশালীর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করুন। আজ ইসরায়েল আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।’ নেসেটের শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু এ কথা বলেন। তাঁর এমন বয়ানে গাজায় চলা যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত ইসরায়েল কতটা মেনে চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আনাদোলু নিউজ, মিডল ইস্ট আই,রয়টার্স,আল জাজিরা।

ইসরাইলের অভিযোগ, হামাসের হামলায় তাদের দুজন সেনা নিহত হয়েছেন। প্রতিক্রিয়ায় গাজা উপত্যকায় কয়েক দফায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে। যদিও হামাস বলছে, এমন কোনো হামলার তথ্য তাদের কাছে নেই। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরাইলী বাহিনীর হামলায় অন্তত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলের দাবি, এতে ১ হাজার ১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় আড়াই শ মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয়। জবাবে ওই দিনই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরাইলী বাহিনী। দুই বছরের হামলায় গাজায় নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা ৬৮ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা মেনে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধবিরতির আওতায় ইসরাইলী বাহিনীর গাজায় অভিযান বন্ধ করার কথা। বিনিময়ে গাজায় জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের (জীবিত ও মৃত) ছেড়ে দেবে হামাস।

অভিযোগ কাতারের গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে ইসরাইল

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার। গতকাল মঙ্গলবার কাতারের আইন পরিষদ শুরা কাউন্সিলে বার্ষিক ভাষণে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তির অব্যাহত লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানান। কাতারের আমির বলেন, “গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ গণহত্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ফিলিস্তিনি জনগণের সুরক্ষা প্রদান করতে হবে এবং গণহত্যার অপরাধীরা যাতে জবাবদিহিতা থেকে রেহাই না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি বলেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনি জনগণের ট্র্যাজেডির ক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শন করতে অক্ষম।” কাতারের আমির আরও বলেন, “আমরা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন এবং কর্মকা-ের নিন্দা জানাই। বিশেষ করে গাজা উপত্যকাকে একটি জনবসতিহীন অঞ্চলে পরিণত করা, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন অব্যাহত রাখা, পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ এবং পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণকে ইহুদিকরণের প্রচেষ্টা।” আমির বলেন, “আমরা আরও নিশ্চিত করি যে, গাজা উপত্যকা ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ফিলিস্তিনি ভূখ-ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।” কাতারের আমির তার বক্তব্যে গত মাসে রাজধানী দোহায় ইসরাইলী হামলার কথাও উল্লেখ করেন। গত মাসে কাতারের রাজধানী দোহায় ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে হামাসের আলোচনার বৈঠকে হামলা চালিয়েছিল ইসরাইল।

কাতারের আমির বলেন, “মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালনকারী একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন এবং আলোচনাকারী প্রতিনিধিদলের সদস্যদের হত্যার চেষ্টা করে ইসরায়েল সব আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। আমরা এই আগ্রাসনকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ বলে মনে করি এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া অপরাধীদের হতবাক করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল।”

ইসরাইলী আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রস্তুত হিজবুল্লাহ

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ আবারও শক্তি পুনরুদ্ধার করেছে। তারা ইসরাইলী বাহিনীর যেকোনো সম্ভাব্য আগ্রাসন মোকাবিলায় পুরোপুরি প্রস্তুত বলেই দাবি করেছেন লেবাননের পার্লামেন্টের একজন সদস্য। হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক শাখা লয়্যালটি টু দ্য রেজিস্ট্যান্স ব্লক-এর সদস্য হাসান ইজেদিন মঙ্গলবার বলেন, হিজবুল্লাহকে পরাজিত করা অসম্ভব। বর্তমানে প্রতিরোধ আন্দোলনটি তার ক্ষমতার শিখরে অবস্থান করছে। ইজেদিন আরও বলেন, হিজবুল্লাহ ইস্পাতের মতো দৃঢ় এবং শক্তিশালী। অবিচল রয়েছে। লেবানিজ সমাজের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার ন্যায়সঙ্গত কারণ তাদের সামনে রয়েছে। তিনি বলেন, লেবাননের প্রতিরোধ ফ্রন্ট তাদের শক্তি ফিরে পেয়েছে। এখনো সুপ্রতিষ্ঠিত আছে। তারা যেকোনো প্রতিকূল পদক্ষেপ, সম্ভাব্য জায়নবাদী শত্রুর স্থল আক্রমণ বা লেবাননের আরও ভূখ- দখলের যেকোনো প্রচেষ্টা মোকাবিলা করতে সক্ষম।

ইজেদিন বিশ্বাস করেন, ইসরাইলী বাহিনী আজ হোক বা কাল হোক দক্ষিণ লেবাননের দখলকৃত এলাকা থেকে সরে যেতে বাধ্য হবে। দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে এই লেবানিজ আইনপ্রণেতা একে মনস্তাত্ত্বিক চাপ, ভীতি প্রদর্শন এবং অর্থনৈতিক সন্ত্রাসের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এই আক্রমণগুলোর লক্ষ্য হলো একটি ভীতিকর পরিস্থিতি বজায় রাখা। তার মতে, ‘বেসামরিক যানবাহন ও অবকাঠামো ধ্বংস করেও তারা আমাদের আত্মসমর্পণ করাতে পারবে না। শত্রুরা কোনোভাবেই আমাদের মনোবল ভাঙতে পারবে না।’ ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাব্য গতিপথ নিয়েও মন্তব্য করেন হাসান ইজেদিন। তিনি জানান, যদি আলোচনাটি সীমান্তের বিরোধপূর্ণ পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করা এবং সমাধানের জন্য পূর্বের ত্রিপক্ষীয় কমিটির মতো হয়, তবে সরকার তা পরিচালনা করতে পারে।

গাজা চুক্তিকে তুরস্কের প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার বানাচ্ছেন এরদোগান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হামাসকে রাজি করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তুরস্ক। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে প্রভাব প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান। এটি ইসরায়েল ও আরব প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুরুতে ট্রাম্পের আলটিমেটাম মানতে অনিচ্ছুক ছিল হামাস। কিন্তু তুরস্কের আহ্বানে তারা অবশেষে রাজি হয়। ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, তুরস্ক নামের একটি জায়গা থেকে আসা এই ভদ্রলোক বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী নেতা। এরদোয়ান একজন নির্ভরযোগ্য মিত্র। আমি যখনই তাকে ডাকি, তিনি সাড়া দেন।