এনডিটিভি : ইসরাইলের অবিরাম হত্যাযজ্ঞে নিশ্চিহ্নপ্রায় গাজা। চারদিকে মৃত্যুর মিছিল। এরই মধ্যে বাড়ছে ক্ষুধা। বন্ধ হয়ে গেছে বেকারিগুলো। বাজারগুলোও খালি পড়ে আছে। এক মাসেরও বেশি সময় অবরুদ্ধ গাজার শেষ খাবারটুকুও ফুরিয়ে আসছে। খাদ্যের অভাবে ইতোমধ্যে শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েছে গাজার বসিন্দারা। একবেলা-আধপেটা খেয়ে দেখা দিয়েছে তীব্র অপুষ্টি। যার জেরে ক্রমবর্ধমান আহত প্রতিবেশী-প্রিয়জনদের রক্ত দিতেও পারছেন না গাজাবাসী। খাদ্যাভাবে সৃষ্ট চরম অপুষ্টির কারণে রক্ত কমে গেছে তাদের নিজেদের শরীরেই!
মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ ভূখ-ে ক্রমবর্ধমান চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ইসরাইলের চলমান অবরোধ এবং অনাহার অভিযানের ফলে সৃষ্ট তীব্র অপুষ্টি অনেক ফিলিস্তিনিকে রক্তদানে বাধা দিচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরাইল। খাদ্য, পানি, জ্বালানি এবং মানবিক সাহায্য প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয় বর্বর সেনারা। পরবর্তী সময়ে থেমে থেমে কিছু ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত থাকলেও ২ মার্চ থেকে আবারও পূর্ণ অবরোধ পুনর্বহাল করে ইসরাইল। এতে আবারও তীব্র খাদ্য সংকটে পড়ে গাজাবাসী। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে রক্তদান কর্মসূচিতে। অপুষ্টির কারণে গাজার অনেকেই রক্তদান করতে অক্ষম হয়ে পড়ছেন। রক্তের ইউনিটের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা।
স্বেচ্ছাসেবক আবদুল্লাহ আল-আরের বলেছেন, ‘আমি সাহায্য করার জন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রক্তদান করা আমার পক্ষে কঠিন ছিল। কারণ, আমাদের শরীর আগের মতো নেই। আমরা অনিরাপদ পানি পান করি। আমার কিছু বন্ধু রক্তদান করতে পারেনি। কারণ, তাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুব কম ছিল।’ গাজা ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে তরুণ স্বেচ্ছাসেবক ইয়াহিয়া আল-জারদ রক্তদান করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি একটি সম্পূর্ণ ইউনিট (৪৫০ গ্রাম) সম্পূর্ণ করতে পারেননি। মাঝপথে থামতে হয়েছিল তাকে। তিনি বলেন, ক্ষুধার কারণে আমি দুর্বল হয়ে পড়ি। এজন্য রক্তদানে ব্যর্থ হই।
হাসপাতালের রক্তদান অভিযানের তত্ত্ববধানকারী ল্যাব বিশেষজ্ঞ হুদা আবু দালাল বলেছেন, রক্তদান করতে আসা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবক রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন। রক্তের মজুত কম থাকায় এবং দাতার সংখ্যা অপর্যাপ্ত হওয়ায় জর্ডান এবং পশ্চিম তীরের দিকে ঝুঁকছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে ইসরাইলি অবরোধের নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলো।
তা সত্ত্বেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বোমা হামলায় জীবন্ত পুড়ে মরেছেন একই পরিবারের ১১ জন। একাধিক বিমান হামলার কারণে খান ইউনিসে ওই বাড়িতে আগুন লেগে যায়। গাজা শহরের পশ্চিম অংশে বিমান হামলায় একটি পরিবারের সাত সদস্যও নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন প্রস্তাব কাতার-মিসরের : হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধে নতুন একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিসর। আলোচনার সঙ্গে যুক্ত এক জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে। ওই কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নতুন এ প্রস্তাব কার্যকর হলে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি থাকবে পাঁচ থেকে সাত বছর।
এই সময়ে জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস, বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে নেতানিয়াহু প্রশাসন। এই চুক্তির আওতায় গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে। হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দারবিশ এবং প্রধান আলোচক খালিল আল হাইয়া এই আলোচনায় থাকবেন। তবে নতুন এ প্রস্তাব সম্পর্কে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ইসরাইল।