বিবিসি, ইপিএ: গাজায় ত্রাণকে ‘অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’ বন্ধ করতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে শতাধিক মানবিক সহায়তা সংস্থা। গতকাল বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে ইসরায়েলকে এই আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো। কারণ তাদের মতে, গাজায় খাদ্যসংকট দিনদিন প্রকট হচ্ছে। অক্সফাম ও মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্সসহ (এমএসএফ) মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তাদের প্রতিনিয়ত জানানো হচ্ছে যে, কঠোর ইসরায়েলি বিধিনিষেধ না মানলে তারা ত্রাণ সরবরাহের ‘অনুমোদন পাচ্ছে না।’

চিঠিতে বলা হয়েছে, যদি কোনও সংস্থা ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ‘অবৈধ’ প্রমাণ করার চেষ্টা করে বা ফিলিস্তিনি কর্মীদের বিস্তারিত তথ্য না দেয়, তবে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে ইসরায়েল বলেছে, ত্রাণে কোনও বিধিনিষেধ নেই। মার্চে চালু হওয়া নতুন নিয়মগুলো নিশ্চিত করে যে ত্রাণ সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছাবে, হামাসের কাছে নয়। যৌথ চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২ মার্চ থেকে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক বড় বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এক ট্রাকও জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম গাজায় পাঠাতে পারেনি। সংস্থাগুলো বলছে, নতুন নিয়মের অজুহাতে ইসরায়েল ‘কয়েক ডজন বেসরকারি সংস্থার জীবনরক্ষাকারী সামগ্রী আনার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে’। শুধু জুলাই মাসেই এ ধরনের ৬০টির বেশি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সংস্থাগুলো সহায়তা পৌঁছে দিতে না পারায় ‘হাসপাতালগুলোয় মৌলিক সরঞ্জামের অভাব দেখা দিয়েছে; শিশু, প্রতিবন্ধী এবং প্রবীণ ব্যক্তিরা অনাহার ও প্রতিরোধযোগ্য অসুস্থতায় মারা যাচ্ছে।’ আমেরিকান নিয়ার ইস্ট রিফিউজি এইডের (আনেরা) প্রধান নির্বাহী (সিইও) শেন ক্যারল বলেন, ‘আনেরার কাছে ৭০ লাখ ডলারের বেশি জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম গাজায় পাঠানোর জন্য প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে ৭৪৪ টন চাল আছে, যা দিয়ে ৬০ লাখ খাবার তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু সেগুলো মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে আশদোদে আটকে দেওয়া হয়েছে।’ ইসরায়েল বলেছে, ত্রাণ পৌঁছাতে দেরি হয় শুধু তখনই, যখন সংস্থাগুলো হামাসের সম্পৃক্ততা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় মৌলিক নিরাপত্তা শর্ত পূরণ করে না। ত্রাণ তদারকির দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কগাট জানিয়েছে, প্রায় ২০টি সংস্থা নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গাজায় ত্রাণ পাঠাচ্ছে এবং দৈনিক প্রায় ৩০০টি ট্রাক প্রবেশ করছে।

অথচ জাতিসংঘ বলেছে গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন। মার্চে চালু হওয়া নতুন নির্দেশিকায় এনজিওদের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার কাঠামো হালনাগাদ করা হয়েছে, যেখানে আবেদন বাতিল বা নিবন্ধন বাতিলের শর্তও যুক্ত হয়েছে। যদি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ মনে করে কোনও সংস্থা ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক চরিত্র অস্বীকার করছে বা দেশটির বিরুদ্ধে ‘অবৈধ প্রচার অভিযান’ চালাচ্ছে, তবে নিবন্ধন প্রত্যাখ্যাত হতে পারে। অক্সফামের নীতি প্রধান বুশরা খালিদি বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় প্রবেশের জন্য ২৫ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যের পণ্য প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি আরও বলেছেন, ‘এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক এনজিওদের কাছে স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হলে স্বাধীনতা ও প্রকাশ্যে কথা বলার ক্ষমতার বিনিময় করতে হতে পারে।’

এই সতর্কবার্তা এসেছে এমন সময়ে, যখন ইসরায়েল গাজা শহরে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনার প্রস্তুতি হিসেবে বোমাবর্ষণ বাড়াচ্ছে। ইসরায়েল বলেছে, তারা যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে বেসামরিক জনগণকে মানবিক সহায়তা দেবে। তবে এই সহায়তা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) দ্বারা সরবরাহ করা হবে কিনা, তা নির্দিষ্ট করেনি। ইসরায়েল আরও বলেছে, এই ব্যবস্থা হামাসের হাত থেকে ত্রাণ চুরি ঠেকাতে জরুরি। হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জাতিসংঘ চলতি মাসে জানিয়েছে, গত মে মাস থেকে জিএইচএফ স্থাপনার কাছে ৮৫৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে জিএইচএফ নিহতের এই সংখ্যা অস্বীকার করেছে। যৌথ বিবৃতিতে গাজার এমএসএফ জরুরি সমন্বয়কারী আইতোর জাবালগোগিয়াজকোয়া বলেছেন, ‘সামরিক খাদ্য বিতরণ প্রকল্প খাদ্যসংকটকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে।’ এমএসএফের মহাসচিব ক্রিস লকইয়ার বিবিসিকে বলেছেন, জিএইচএফ একটি ‘মৃত্যুফাঁদ’ এবং গাজার মানবিক পরিস্থিতি মাত্র একটি ‘সুতোয় ঝুলে আছে’।