নিক্কেই এশিয়া : ভারতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর নতুন হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেট (সিএসওএইচ)-এর সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কড়া সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির দাবি-এআই সংখ্যালঘুবিরোধী প্রচারণার শক্তিশালী অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া জানায়, ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সিএসওএইচ-এর ৬০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়-২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে মুসলিমদের লক্ষ্য করে তৈরি করা ১ হাজার ৩২৬টি এআই-নির্ভর ঘৃণামূলক পোস্ট শনাক্ত করা হয়েছে।

এগুলো ছড়িয়েছে এক্স (সাবেক টুইটার), ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে সক্রিয় ২৯৭টি পাবলিক অ্যাকাউন্ট থেকে। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রাকিব হামিদ বলেন, এ সংখ্যা কেবল দৃশ্যমান অংশ। সমগ্র ডিজিটাল জগতে এর ব্যাপ্তি অনেক বেশি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়-২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে এ ধরনের কার্যক্রম হঠাৎ বেড়ে যায়। এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে এর মতো সহজলভ্য এআই ইমেজ টুল, যেগুলো এখন সাধারণ ব্যবহারকারীর হাতেও পৌঁছে গেছে।

সিএসওএইচ জানায়, এসব এআই-নির্মিত ছবি ও ভিডিও মুসলিমদের মানবিকতাবোধহীনভাবে উপস্থাপন, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার, সহিংসতাকে নান্দনিকভাবে সাজানো এবং ইসলাম ও মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে যৌন অবমাননাকর প্রচারণা চালানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে গবেষণাটি। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে-দেশটির বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে কোনো সাধারণ প্রতিবাদ বা সংঘাতকেও সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে রূপ দেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে যারা ঘৃণা ছড়াতে আগ্রহী তাদের মাধ্যমে।

নিক্কেই এশিয়াকে ডিজিটাল প্রাইভেসি বিশেষজ্ঞ শ্রীনিবাস কোদালি বলেন, ‘সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো-এআই-নির্মিত কনটেন্ট সমাজে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এআই-নির্মিত মিডিয়ার প্রভাব সরলরেখায় চলে না। এটি নির্ভর করে কে দেখছে, কীভাবে ব্যাখ্যা করছে তার ওপর। তিনি আরও বলেন, সরকার যদিও এআই-কে ‘উন্মুক্ত, সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য’ করতে চায়, তবু ভুয়া তথ্য, মানহানি ও ঘৃণাবাচক কনটেন্টের মতো সমস্যাগুলো এখন আরও জটিল আকার ধারণ করছে। রাকিব হামিদের মতে, সমস্যার মূল উৎস এআই মডেল তৈরিকারী কোম্পানিগুলোর অনিয়ন্ত্রিত প্রশিক্ষণ ডেটা, যেগুলোতে ঘৃণাবাচক ও বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। প্রতিবেদনটির শেষে নয়টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো-এআই মডেল নির্মাতাদের অবিলম্বে কার্যকর শনাক্তকরণ, রিপোর্টিং ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু করা, যাতে অপব্যবহার দ্রুত রোধ করা যায়। এ উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় নতুন নিয়মের প্রস্তাব দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো এআই-নির্মিত কনটেন্ট প্রকাশের আগে ব্যবহারকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে তা উল্লেখ করতে হবে। এআই-নির্ভর ঘৃণা প্রচারের এ প্রবণতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা-যদি নিয়ন্ত্রণ না আনা যায়, তবে এটি ভবিষ্যতে ভারতের সামাজিক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় সহাবস্থানের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠতে পারে।