এএফপি, আনাদোলু : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলী হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৫৬ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। এতে করে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৫১ হাজার ৫০০ জনে পৌঁছেছে। গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরাইলী হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ২১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন।

২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলী আক্রমণে আহত হওয়া আরও ১০৮ জনকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫২৪ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। ইসরাইলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনী বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরাইল।

এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ৬০দিন ধরে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে দখলদার ইসরাইল। এই সময়ে গাজায় কোনো খাবার, জ্বালানি, ওষুধ প্রবেশ করতে দেয়নি দখলদাররা। অবরোধের কারণে গাজার মানুষ এখন টিনজাত শাকসবজি, ভাত, পাস্তা ও মশুর ডাল খেয়ে বেঁচে আছেন। সেখানে এখন মাংস, দুধ, পনির অথবা ফল পাওয়া যায় না। রুটি আর ডিমও দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। বাজারে যেসব সবজি ও পণ্য পাওয়া যায় সেগুলোর দামও আকাশ ছোঁয়া। এতে অনেক মানুষ খাবার কিনে খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছেন। ফিলিস্তিনী পরিবারগুলো জানিয়েছে, তারা তাদের শিশুদের মুখেও এখন খাবার তুলে দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

গত শুক্রবার মরিয়ম আল-নাজ্জার নামে এক নারী তার পরিবারের ১১ জনকে নিয়ে শুধুমাত্র একবেলা খাবার খান। আর বাকি সময়টায় না খেয়ে ছিলেন। ওই একবেলায় জুটেছিল ভাত, টিনজাত মটর দানা আর গাজর। “ফিলিস্তিনীদের কাছে শুক্রবার একটি পবিত্র দিন। এদিন পরিবারগুলো মাংস, ভালো শাকসবজি এবং অন্যান্য খাবার খায়। কিন্তু এখন আমরা শুক্রবারে মটর দানা আর ভাত খাচ্ছি। আমরা এ যুদ্ধের আগে জীবনে কখনো টিনজাত সবজি খাইনি।

এ যুদ্ধ আমাদের জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন কোনো খাবার এখন পাই না যেগুলো আমাদের প্রোটিন ও পুষ্টি দেবে।” তবে তার শঙ্কা হলো দখলদার ইসরাইল যেহেতু এখনো অবরোধ আরোপ করে রেখেছে তাই কয়েকদিন পর গাজায় খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, খাবারের অভাবে “কয়েকদিন পর হয়ত আমরা বালু খাব।”