রয়টার্স, আল-জাজিরা ,তাসনিম, এক্সে : বিভিন্ন শহরে ইসরাইলের প্রাণঘাতী হামলার পর ইরানের কুম শহরে শত শত বিক্ষোভকারী জমায়েত হয়ে কঠোর প্রতিশোধের দাবি জানিয়েছে। প্রকাশিত ইরানের তাসনিম সংবাদ সংস্থার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কুম শহরের জামকারান মসজিদে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ইরানের পতাকা হাতে নিয়ে ইসরাইলবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। তেহরান থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত কুম শহর ইরানের অন্যতম পবিত্র নগরী। গত শুক্রবার ভোরে চালানো ইসরাইলী হামলায় উচ্চপদস্থ সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, নারী, শিশুসহ বহু মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরাইলী হামলায় ইরানের ছয়জন পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। তারা হলেন—আব্দুল্লাহ মিনৌচেহর, আহমাদ রেজা জলফাঘারি, সায়েদ আমির হোসেন ফাকহি, মোতলাবিজাদেহ, ফেরেদুন আব্বাসি এবং মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি।
ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘অপারেশ রাইজিং লায়ন’-এর অংশ হিসেবে এসব হামলা চালানো হয়েছে। মূলত ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সক্ষমতা ধ্বংসেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল বিভিন্ন পারমাণবিক কেন্দ্র এবং বিজ্ঞানীরা। এ ছাড়া, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদর দপ্তরেও হামলা চালানো হয়। ছয় বিজ্ঞানী ছাড়াও ইসরাইলের হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ তিন সামরিক কমান্ডার। নিহতরা হলেন—সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি; ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং খাতাম আল-আম্বিয়া সেন্ট্রাল সদর দপ্তরের কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলী রশিদ।
কয়েক দিন ধরেই ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল। খুব শিগগিরই বড়সড় কোনো হামলা হবে আশঙ্কা করা করছিলেন বিশ্লেষকেরা। আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোরে সেই আশঙ্কাই বাস্তবায়িত করল ইসরাইলী সেনাবাহিনী আইডিএফ। ইরান জুড়ে পাঁচ ধাপে হামলা চালিয়েছে তারা। অন্তত আটটি শহর লক্ষ্য করে শত শত হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরাইলী হামলার পর আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ ইরানিরা : ইসরাইলী বিমান হামলার পর আতঙ্ক আর ক্ষোভে ফুঁসছে ইরান। কেউ চায় পাল্টা হামলা, আবার কেউ ভয় পাচ্ছেন দীর্ঘমেয়াদি সংকটে দেশ অচল হয়ে পড়বে। অনেকেই আশ্রয়ের খোঁজে ভাবছেন প্রতিবেশী তুরস্কে পালিয়ে যাওয়ার কথা। গত বৃহস্পতিবার রাতের ইসরাইলী হামলার শব্দে কেঁপে ওঠে তেহরানসহ ইরানের একাধিক শহর। নাতাঞ্জ শহরের বাসিন্দা ৩৯ বছর বয়সী মারজিয়ে বলেন, একটা বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। আতঙ্কে আমরা সবাই রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। খুবই ভয় পেয়েছিলাম। মারজিয়ে আরও বলেন, আমি আমার সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। যুদ্ধ শুরু হলে তাদের নিরাপদ রাখবো কী করে?
ইসরাইল জানিয়েছে, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। হামলার পরদিন সকালে ব্যাংকে ভিড় করেন আতঙ্কিত ইরানিরা। দক্ষিণাঞ্চলীয় শিরাজ শহরের বাসিন্দা ও সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মাসউদ মোসাভি বলেন, আমি তুর্কি লিরা কিনে পরিবার নিয়ে স্থলপথে তুরস্কে যাব। বিমান চলাচল বন্ধ, তাই এটাই একমাত্র উপায়। আমি যুদ্ধের ঘোর বিরোধী। নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু চাই না।
একই সময়ে তেহরানে কয়েকজন মানি এক্সচেঞ্জার বলেন, তারা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন। তবে অতিরিক্ত আতঙ্ক ছিল না বলেও জানান। নাগরিকদের কেউ কেউ ইসরাইলের হামলার নিন্দা করলেও, অনেকে আবার সরকারের কঠোর জবাবের পক্ষে। তেহরানের এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের জবাব দিতেই হবে।
না হলে তারা আমাদের অস্ত্র কেড়ে নেবে। তখন আমরা পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করব। তবে অনেকে মনে করছেন, পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে দেশটির ওপর সংকট ও চাপ বেড়েই চলেছে। উত্তরাঞ্চলীয় চালুস শহরের শিক্ষক মোহাম্মদ রেজা বলেন, এই কর্মসূচির জন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। এখন আবার সামরিক হামলা। আমরা আর কষ্ট চাই না। পবিত্র কোম শহর থেকে ফোনে আলি নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার বাবা ইরান-ইরাক যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। আমিও প্রাণ দিতেই প্রস্তুত। আমরাও পারমাণবিক কর্মসূচির অধিকার রাখি। আমেরিকা ও ইসরাইল এই অধিকার কেড়ে নিতে পারবে না।