আনাদোলু : গাজায় ইসরাইলী বাহিনীর তাণ্ডবে আরো অর্ধশত নিহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা ৫৬ হাজারে পৌঁছেছে।
এদিকে গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর গুলি করায় উদ্বেগ, ক্ষোভ জানিয়েছেন গাজা ও পশ্চিম তীরে জাতিসংঘের মানবিক সংস্থার প্রধান জোনাথন হুইটাল। তিনি বলেন, গাজায় যা কিছু ঘটছে, তা যেন একটি জাতিকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলার প্রচেষ্টা। এখনই বন্দুক থামাতে হবে, বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তার বক্তব্যের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, খাবার সংগ্রহ করতে যাওয়া জনতার ওপর ইসরাইলি বাহিনীর গুলি চালানোর এক শীতল ও নৃশংস ধারা গড়ে উঠেছে।
গত রোববার দেইর আল-বালাহ শহরে সংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বেঁচে থাকার চেষ্টা যেন মৃত্যুদণ্ডে পরিণত হয়েছে। এটা কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়। জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ সংগ্রহের সঙ্গে মৃত্যু মিশে থাকা এক ভয়ংকর বাস্তবতা। গত ১২ দিনে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় প্রায় ৪৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়েছেন। তারা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্রে গিয়েছিলেন খাদ্য সংগ্রহ করতে। বিনিময়ে তাদের বুকে গুলি করা হয়েছে। অভুক্ত মানুষ লাশ হয়েছেন।
উল্লেখ্য, জিএইচএফ প্রকল্পভিত্তিক ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা বর্তমানে গাজায় সহায়তা বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রানচেস্কা আলবানিজে এক্সে লিখেছেন, যে রাষ্ট্র গণহত্যা ও অভুক্ত রাখার অভিযোগের মুখোমুখি, তাকেই আবার ‘ত্রাণ বিতরণের’ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা একদিকে অশ্লীল, অন্যদিকে মানবিক মর্যাদার প্রতি এক চরম অবমাননা। এরই মধ্যে গাজায় মানবিক সংকট চরমে। সেখানে পানির কূপ শুকিয়ে গেছে অথবা বিপজ্জনক এলাকায় অবস্থিত। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। রোগব্যাধি ভয়াবহভাবে ছড়াচ্ছে। অধিকাংশ হাসপাতাল ইসরাইলি হামলায় অচল হয়ে গেছে। যে ক’টি আংশিকভাবে চালু আছে, সেগুলো প্রতিদিনের গণহত্যা-পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
জাতিসংঘ কর্মকর্তা হুইটাল বলেন, আমাদের হাতে এমন পরিকল্পনা আছে যা গাজার প্রতিটি পরিবারকে সহায়তা দিতে সক্ষম। কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপেই বাধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। নিহতদের মধ্যে ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থীও রয়েছেন। এতে করে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫৬ হাজারে পৌঁছে গেছে। গত রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৫ হাজার ৯৫৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
রোববার দেওয়া এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫১টি মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং নতুন করে আহত হয়েছেন ১০৪ জন। সব মিলিয়ে ইসরাইলি আগ্রাসনে আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ২৪২ জনে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “অনেক মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে কিংবা রাস্তায় পড়ে রয়েছে। উদ্ধারকারীরা অনেক জায়গায় পৌঁছাতে পারছেন না।”
ইসরাইল ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় হামলা শুরু করে, যার ফলে এখন পর্যন্ত আরও ৫ হাজার ৬৪৭ জন নিহত এবং ১৯ হাজার ২০১ জন আহত হয়েছেন। অথচ জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়েছিল, যা এই হামলার মধ্য দিয়ে ভেঙে যায়।
২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োআভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় চালানো যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও গণহত্যার মামলা চলছে।