ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে হামলা চালাচ্ছে দখলদার ইসরাইল। যার ফলে উপত্যকাটিতে বেড়েই চলেছে নিহতের সংখ্যা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলা ইসরাইলী হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯ হাজার ১৬৯ জনে পৌঁছেছে। আল জাজিরা, টাইমস অব ইসরইল ।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, গত মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরাইলী হামলায় ২৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার ইসরাইলী হামলায় আরও দুই ফিলিস্তিনির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের পরও নানা অজুহাতে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলী সেনারা। গাজার উত্তর সীমান্তে ‘ইয়েলো লাইন’ অতিক্রম করার অভিযোগ তুলে হত্যা করেছে আরও কয়েকজনকে। স্থানীয়দের দাবি, যুদ্ধবিরতির পর নির্ধারিত এই ‘ইয়েলো লাইন’ আসলে অদৃশ্য এক সীমা, যা কোথায় রয়েছে কেউ জানে না। এতে ইসরাইলী বাহিনীর গুলিতে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। হামলা চলছে অন্যান্য এলাকাতেও। নেতানিয়াহু বাহিনীর পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরিত হয়ে প্রাণ গেছে শিশুরও।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ইসরাইল প্রায় দুই লাখ টন বোমা ফেলেছে গাজায়, যার মধ্যে ৭০ হাজার টন এখনো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। গাজার শেখ রাদওয়ান এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ দূষিত পানির সংকট। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পুকুরে জমে আছে ময়লা-আবর্জনা। ইসরাইলী হামলায় পাম্প স্টেশন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ওই পানি ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের বসতি ও আশ্রয়শিবিরে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পানির স্তর ৬ মিটার পর্যন্ত বেড়ে গেছে, যা দুর্গন্ধ, মশা ও সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার ভূগর্ভস্থ পানির বেশিরভাগ অংশই এখন মারাত্মকভাবে দূষিত। এদিকে, পশ্চিম তীরেও বাড়ছে সহিংসতা। জেনিনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের রাবা গ্রামে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘরে হামলা চালায় ইসরাইলী বসতি স্থাপনকারীরা। তাদের সহায়তা করছে সেনারা। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর থেকে পশ্চিম তীরে ৭০টি গ্রামে ১২৬টি সহিংস হামলা হয়েছে। পুড়ে গেছে চার হাজারেরও বেশি জলপাই গাছ।
সুড়ঙ্গে আটকে থাকা হামাস যোদ্ধারা আত্মসমর্পণ করবে না : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার রাফার সুড়ঙ্গে আটকে থাকা যোদ্ধারা আত্মসমর্পণ করবে না বলে জানিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। গত মাসে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর রাফার ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে আটকা পড়েন তারা। এই যোদ্ধারা যেখানে আছেন সেসব স্থান এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হামাস রাফা থেকে লেফটেনেন্ট হাদার গোল্ডিন নামে এক ইসরায়েলি সেনার মরদেহ খুঁজে বের করে। যিনি ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির জানিয়েছিলেন, হামাস যদি গোল্ডিনের লাশ ফেরত দেয় তাহলে রাফাতে আটকে থাকা হামাস যোদ্ধাদের নিরাপদ প্রস্থান দেবেন তারা।
তবে এর আগে এসব হামাস যোদ্ধাকে ইসরায়েলের কাছে আত্মসমর্পণ এবং অস্ত্র জমা দিতে হবে। এরপর ইসরায়েল তাদের কথিত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করবে। এই শর্তের জেরে হামাসের সামরিক শাখা ইজ আল-দ্বীন আল-কাশেম ব্রিগেড গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা কোনোভাবেই আত্মসমর্পণ করবে না। আত্মসমর্পণ শব্দ তাদের অভিধানে নেই। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে হামাসের এসব যোদ্ধার সঙ্গে যদি ইসরায়েলি সেনাদের কোনো ধরনের সংঘর্ষ হয় তাহলে এর দায় দখলদারদের নিতে হবে। হামাস বলেছে, ‘ইজ আল-দ্বীন আল-কাশেম ব্রিগেডের অভিধানে আত্মসমর্পণ বলে কিছু নেই। আমাদের নীতিতে আত্মসমর্পণ অথবা শত্রুর কাছে নিজেদের সমর্পণ বিষয়ক কিছু নেই। যুদ্ধবিরতি যেন অক্ষুন্ন থাকে সেটি মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে।’ এদিকে লেফটেনেন্ট হাদার গোল্ডিনের লাশ ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করে হামাস। এরপরই জানা যাবে হামাসের এসব যোদ্ধার ভাগ্যে কি ঘটবে।