ডন, রয়র্টার্স, নিউইয়ার্ক টাইমস : কাশ্মীরের পেহেলহামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহতের ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। টানা পাঁচ দিন ধরে কাশ্মীর সীমান্তে দেশ দুইটির বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলী হয়েছে। তবে এতে এখন পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে, কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) কাছে ভারতীয় কোয়াডকপ্টার ড্রোন গুলী করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এক প্রতিবেদনে জানায়, ড্রোনটি আকাশসীমা লঙ্ঘন করার পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গুলী চালিয়ে ড্রোনটি ভূপাতিত করে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পেহেলগাম হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার ভেতরেই আজাদ কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি)-তে ভারতের একটি নজরদারি ড্রোন ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। যদিও এ নিয়ে ভারতের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

আরও জানিয়েছে, সোমবার পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরের ভিম্বার জেলার মানওয়ার সেক্টরে ভারতীয় ওই কোয়াডকপ্টার ড্রোনটি ভূপাতিত করে। নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত রেডিও পাকিস্তান এবং পিটিভি নিউজ জানিয়েছে, পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন প্রতিহত করে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর একটি ভারতীয় কোয়াডকপ্টার সফলভাবে ভূপাতিত করেছে।

পাকিস্তানি সেনারা এক ভারতীয় সীমান্তরক্ষীকে আটক করার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। গত সপ্তাহে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর ইতোমধ্যে দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল।

ভারতের আধাসামরিক বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সদস্য পুরনম কুমার শ-কে পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী পাকিস্তান রেঞ্জার্স বুধবার আটক করে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, পাঞ্জাবের সীমান্তে কৃষকদের ফসল তদারকি করতে গিয়ে তিনি অনিচ্ছাকৃত পাকিস্তানি সীমানায় চলে যান তিনি।

এই ঘটনার আগের দিন কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার এনেছে এবং সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে। পাকিস্তান এই দাবি অস্বীকার করে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। পুরনম কুমার শ আটক হওয়ায় পাকিস্তান এখন একটি কূটনৈতিক সুবিধা পেতে পারে, যা ভারতের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপকে প্রভাবিত করতে পারে। ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি নন। তবে একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা শ’র আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শ’র পরিবার তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। তার ভাগ্নে রাহুল শ বলেছেন, আমরা তার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। বিএসএফ আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে তারা তাকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনবে। পুরনমের ৮ বছরের একটি ছেলে আছে এবং তার স্ত্রী দ্বিতীয় সন্তানের অপেক্ষায় রয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের সংসদ সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জি জানিয়েছেন, ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে নিশ্চিত করেছেন যে শ সুস্থ আছেন এবং তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার সম্ভাব্য সব চেষ্টা করছে। কীভাবে প্রায় দুই দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই সীমান্তরক্ষী পাকিস্তানের হেফাজতে চলে গেলেন, তার স্পষ্ট বিবরণ জানা যায়নি। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কিছু অংশে নিরাপত্তা বিন্যাস জটিল। অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় কৃষিজমি ‘জিরো পয়েন্ট’ বা সীমান্তরেখার খুব কাছাকাছি অবস্থিত। বিএসএফ কৃষকদের পরিচয়পত্র দিয়ে তাদের জমিতে প্রবেশের অনুমতি দেয় এবং তাদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখে। এ ধরনের অনিচ্ছাকৃত সীমান্ত পার হওয়ার ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে।

২০১৯ সালে কাশ্মির ইস্যুতেও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। তখন ভারত বিমান হামলা চালালে পাকিস্তান এক ভারতীয় পাইলটকে আটক করেছিল। পরবর্তীতে সেই পাইলটের মুক্তি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রেখেছিল।

অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল কে. জে. সিং বলেছেন, সীমান্তরক্ষীদের অনিচ্ছাকৃতভাবে সীমান্ত পার হওয়া সাধারণ ঘটনা, তাই পাইলট আটকের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, এই ঘটনায় দুই দেশের আলোচনা সাধারণের চেয়ে বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে।