জন ম্যাকডুগল,এএফপি: আফগানিস্তানে দণ্ডপ্রাপ্ত ৮১ জন আফগান নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে জার্মানি। অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান দেখাতে চায় দেশটির নতুন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের সরকার। গত শুক্রবার জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ওই ৮১ জন আফগান নাগরিককে বহনকারী একটি বিমান আফগানিস্তানের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছে। এরা সকলেই জার্মান আদালতে অপরাধের দায়ে দণ্ডিত এবং তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ কার্যকর করা হয়েছে। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট বলেন, ‘আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ভবিষ্যতেও নিরাপদে অব্যাহত থাকবে। আমাদের দেশে কোনো গুরুতর অপরাধীর থাকার অধিকার নেই।’

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর জার্মানি আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো বন্ধ করেছিল এবং কাবুল দূতাবাসও বন্ধ করে দেয়। তবে গত বছর প্রথমবারের মতো আবারও ফেরত পাঠানো শুরু হয়। সে সময় ২৮ জন দণ্ডিত আফগান নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। গত শুক্রবারের বহিষ্কার প্রক্রিয়ায় কাতারের সহায়তা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তালেবান সরকারের সাথে কোনো সরাসরি যোগাযোগ না রেখে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের শঙ্কা: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছে, আফগানিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘দুর্বিষহ’। সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম এবং নির্যাতন দেশটিতে প্রতিদিনের বাস্তবতা।’ প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আফগানিস্তানের দুই শীর্ষ তালেবান নেতার বিরুদ্ধে নারী ও কিশোরীদের উপর নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর নীতি: চ্যান্সেলর মার্জ বলেছেন, জার্মানি ‘অভিবাসনের জন্য আকর্ষণীয় দেশ’ হতে চায়, যাতে দক্ষ জনবল আনা সম্ভব হয়। তবে, তিনি অভিযোগ করেছেন যে, আগের সরকারের নীতির কারণে স্থানীয় প্রশাসনের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। এ জন্য অভিবাসন নীতিতে ‘সংশোধন’ আনা হচ্ছে। মার্জের সরকার সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ জোরদার এবং কিছু শরণার্থীর পরিবারের পুনর্মিলনের অধিকার সীমিত করার পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসন রোধ ও দণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

দক্ষিণ জার্মানিতে ফ্রান্স, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক ও চেক প্রজাতন্ত্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্র কমিশনারের সাথে অভিবাসন ইস্যুতে বৈঠক করেছেন ডোব্রিন্ডট। ইউরোপীয় পর্যায়ে অভিবাসন নীতি আরও শক্তিশালী করাই বৈঠকের উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি। এদিকে, জার্মানির কট্টর ডানপন্থি এএফডি পার্টির উত্থানের প্রেক্ষাপটে অভিবাসন ইস্যুটি দেশটির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনে দলটি ২০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে, যা তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ডোব্রিন্ডট আরও জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের পাশাপাশি সিরিয়ার প্রতিও ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চালুর বিষয়ে তারা কাজ করছে। উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে সিরিয়ায় ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। গত ডিসেম্বরে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হলে দেশটি এখন একাধিক নেতার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ একসময় আল-কায়েদার সাথে জড়িত ছিলেন।