রয়টার্স : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরাসরি বৈঠকের আপাতত কোনও সম্ভাবনা নেই। ইতোমধ্যে ইউক্রেনে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে মস্কোর আপত্তিকে ঘিরে গত মঙ্গলবার দুই নেতার পূর্বনির্ধারিত বৈঠকটি স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসন প্রক্রিয়া এখনও অনিশ্চয়তার চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। হোয়াইট হাউজের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে শিগগিরই কোনও বৈঠকের পরিকল্পনা নেই। ওই কর্মকর্তার মন্তব্যের আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের মধ্যে ফোনে একটি 'গঠনমূলক' আলাপ হয়েছে বলে জানা গেলেও, ট্রাম্প-পুতিন সরাসরি বৈঠক থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। গত সপ্তাহে ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, পুতিনের সঙ্গে শিগগিরই হাঙ্গেরিতে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। সমস্যা হচ্ছে, ইউক্রেনে ভূখ- দখলের দাবিতে পুতিনের দিক থেকে কোনও নড়চড় নেই। মস্কোর দীর্ঘদিনের দাবি, যুদ্ধবিরতির আগে ইউক্রেনকে নির্দিষ্ট কিছু এলাকা হস্তান্তরে রাজি হতে হবে।

পুতিনের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি 'অর্থহীন বৈঠক' চান না। তবে পরবর্তী দুদিনের মধ্যে এ বিষয়ে নতুন অগ্রগতি হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এদিকে, পুতিনের বিনিয়োগ প্রতিনিধি কিরিল দিমিত্রিয়েভ সামাজিক মাধ্যমে জানান, বৈঠকের প্রস্তুতি অব্যাহত রয়েছে। দুই মার্কিন কর্মকর্তা ও পুরো বিষয়টি নিয়ে অবগত ঘনিষ্ঠ দুটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া গত সপ্তাহান্তে ওয়াশিংটনে পাঠানো একটি ব্যক্তিগত বার্তায় নিজেদের অবস্থান আবারও তুলে ধরেছে। ওই বার্তায় স্পষ্ট বলা হয়, তারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিতর্কিত ডনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় যা কার্যত ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করে। বর্তমানে রাশিয়া লুহানস্ক প্রদেশের পুরো অংশ এবং পার্শ্ববর্তী ডোনেস্কের প্রায় ৭৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তবে ইউক্রেনে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি থেকে যেন পিছু না হটার জন্য মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। তারা বলেন, বর্তমান ফ্রন্টলাইন ধরেই ভবিষ্যৎ আলোচনা অগ্রসর হওয়া উচিত। পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো জানায়, মহাসচিব মার্ক রুট্টে মঙ্গলবার ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে গেছেন। এ বিষয়ে অবহিত দুটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকটি বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

এক পশ্চিমা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইউরোপের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি ও ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনার বিষয়ে ট্রাম্পের কাছে ন্যাটোর অবস্থান তুলে ধরবেন রুট্টে। গত সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে ফোনে এবং হোয়াইট হাউজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ট্রাম্প। তিনি আশা করেছিলেন, আলাস্কায় আগস্টে ব্যর্থ হওয়া আলোচনার পর এবার পুতিনের সঙ্গে নতুন বৈঠক ফলপ্রসূ হবে। তবে আগমী বৃহস্পতিবার বুদাপেস্টে রুবিও এবং ল্যাভরভের মধ্যে পূর্বনির্ধারিত প্রস্তুতিমূলক বৈঠকটিও স্থগিত করা হয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে। কিন্তু যা এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তা আমরা স্থগিত করতে পারি না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা প্রেসিডেন্ট পুতিন কেউই নির্দিষ্ট তারিখ জানাননি। সম্ভাব্য বৈঠকের তারিখ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পেসকভ বলেন, এ বিষয়ে কোনও ধারণা নেই।

অবশ্য কেউই প্রকাশ্যে বৈঠকের পরিকল্পনা বাতিল করেনি। গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে অবস্থানরত হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজিয়ার্তো ফেসবুকে লিখেছেন, আমাদের সামনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন রয়েছে। তবে দুই জ্যেষ্ঠ ইউরোপীয় কূটনীতিবিদের মতে, রুবিও-ল্যাভরভ বৈঠক স্থগিত হওয়া ইঙ্গিত দেয় যে, রাশিয়া তাদের অবস্থান না বদলালে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সম্ভাবনা নেই। এক কূটনীতিক বলেন, আমার মনে হয় রাশিয়া এমন কিছু দাবি করেছিল, যাতে যুক্তরাষ্ট্র বুঝে গেছে যে বুদাপেস্টে কোনও সমঝোতা সম্ভব নয়। অন্য এক কূটনীতিক বলেন, রাশিয়া মোটেও তাদের অবস্থান বদলায়নি। ল্যাভরভ সম্ভবত একই যুক্তি দিয়েছেন, আর রুবিও বলেছেন তাহলে পরে দেখা হবে।