দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যে মগজখেকো অ্যামিবার সংক্রমণে একের পর এক মৃত্যু হচ্ছে। এ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ১৯ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে আছেন তিন মাস বয়সী শিশু থেকে শুরু করে ৯২ বছর বয়সী প্রবীণও।

মালাপ্পুরামের বাসিন্দা ৪৫ বছরের শোভনা ওনাম উৎসবের ঠিক আগে ন্যাগ্লেরিয়া ফাওলেরি সংক্রমণে মারা যান। প্রথমে মাথা ঘোরা ও উচ্চ রক্তচাপের কারণে ওষুধ দেওয়া হলেও দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটে। ভয়ানক জ্বর ও কাঁপুনির পর ৫ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ন্যাগ্লেরিয়া ফাওলেরি নামের এই অ্যামিবা সাধারণত উষ্ণ ও মিষ্টি জলে বাস করে। সাঁতার কাটার সময় বা নাক দিয়ে পানি প্রবেশ করলে এটি মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় এবং মারাত্মক সংক্রমণ ঘটায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই রোগকে বলা হয় প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনজিওএনসেফালাইটিস (PAM)।

বিশ্বব্যাপী ১৯৬২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৮৮ জন রোগী চিহ্নিত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশই মারা গেছেন। তবে কেরালায় গত কয়েক বছরে রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে, একইসঙ্গে চিকিৎসার উন্নতির কারণে মৃত্যুহার কিছুটা কমেছে। গত বছর আক্রান্ত ৩৯ জনের মধ্যে ২৩ শতাংশের মৃত্যু হয়েছিল, আর এ বছর মৃত্যুহার ২৪.৫ শতাংশ।

কেরালায় প্রায় ৫৫ লাখ কুয়া ও ৫৫ হাজারের বেশি পুকুর রয়েছে। এসব জলাশয় দূষিত হওয়ায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। অনেকে স্নান, ধর্মীয় রীতি বা এমনকি নেশাজাতীয় দ্রব্যের সঙ্গে পুকুরের পানি মিশিয়ে ব্যবহার করায় ঝুঁকি বাড়ছে।

জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখন সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছেন। নাক পরিষ্কারের সময় উষ্ণ পানি ব্যবহার, দূষিত পুকুর বা অপরিশোধিত পানি এড়িয়ে চলা, সাঁতারের সময় নোজ-প্লাগ ব্যবহার এবং নিয়মিত জলাধারগুলোতে ক্লোরিন মেশানোসহ নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে এই রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে। উষ্ণ পানি ও দূষিত পরিবেশ অ্যামিবার টিকে থাকার জন্য আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি করে। ফলে ভবিষ্যতে কেবল কেরালাই নয়, অন্য অঞ্চল ও দেশেও এই সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।