মেহের,রয়টার্স, টাইমস অব ইসরাইল : ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্প এখন পর্যন্ত ৯০০টিরও বেশি প্রতিরক্ষা ও অস্ত্রব্যবস্থা তৈরি করেছে। যা ইরানের জন্য ইসলামি বিপ্লবের আগের সময়ের তুলনায় এক বিশাল অগ্রগতি বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানী বলেন, ‘আজ আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সবচেয়ে আধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও ড্রোন সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত’। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষা শিল্প আজ এমন এক স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে এখন অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি করা ৯০০-রও বেশি প্রকারের প্রতিরক্ষা ও অস্ত্রব্যবস্থা মজুদ রয়েছে’। ফাতেমেহ মোহাজেরানী এ সময় উল্লেখ করেন যে, ইসলামি বিপ্লবের আগে ইরানের হাতে মাত্র ৩১টি মৌলিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ছিল। কিন্তু আজ, ইরানি যুবসমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদানের ফলে ইরান এই প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় পৌঁছেছে। ইরানী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও জানান, এর ফলে বিশ্বে ইরানের বৈজ্ঞানিক অবস্থান ৪০ ধাপ উন্নীত হয়ে এখন ১৬তম স্থানে রয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না। ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার প্রাক্কালে এমন মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে । যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ ওমানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে দেখা করার কয়েক ঘন্টা আগে ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি চাই ইরান একটি চমৎকার, মহান, সুখী দেশ হোক। তাই তাদের পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না। এদিকে, মার্কিন ও ইরানি প্রতিনিধিদল আলোচনার জন্য ওমানে পৌঁছেছেন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার আলোচনায় নতুন কোনও চুক্তি হতে পারে বলে আশা করছে সৌদি আরব। সূত্রের মতে, সৌদি আরব আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনার যেকোনো নতুন চুক্তি ‘তেহরানকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে’-এমনকি পূর্ববর্তী পারমাণবিক চুক্তির চেয়েও বেশি। সৌদি আরবের এই প্রত্যাশা এমন সময়ে সামনে এলো যখন মার্কিন ও ইরানি প্রতিনিধিদল আলোচনার জন্য ওমানে পৌঁছেছেন। এটি পূর্ববর্তী জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান (জেসিপিওএ) এর শর্তাবলী থেকেও গুরুতর পদক্ষেপ হবে। পূর্ববর্তী এই চুক্তি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং উৎপাদন সীমিত করেছিল। জেসিপিওএ চুক্তি ২০১৫ সালে সম্পন্ন হয়। ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের ওপর চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে এটি বাতিল করেন।
নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চীনে তেল রপ্তানিতে ইরানের রেকর্ড : মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চীনে প্রতিদিন গড়ে ১৮ লাখ ব্যারেলের বেশি জ্বালানি তেল রপ্তানি করছে ইরান। এই পরিমাণ জ্বালানি তেল রপ্তানিকে নজিরবিহীন বলা হচ্ছে। ইরানি গণমাধ্যম পার্সটুডে জানিয়েছে, তেহরানের বিরুদ্ধে নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়তে পারে, এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই তেল রপ্তানি বৃদ্ধির খবর এসেছে।
জাহাজ ট্র্যাকিং কোম্পানি ভর্টেক্সার তথ্য অনুসারে, মার্চ মাসে ইরান থেকে চীনের তেল আমদানি প্রতিদিন ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেল ছাড়িয়ে গেছে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এই তথ্য চীনের শানডং প্রদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিফাইনারি সেন্টারে মজুদের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে মিলে যায়। এদিকে, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ সংস্থা কেপলারের তথ্য অনুসারে মার্চ মাসে চীনে ইরানের তেলের গড় রপ্তানি ছিল প্রতিদিন ১.৭১ মিলিয়ন ব্যারেল যা ফেব্রুয়ারি মাসের রপ্তানির চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি এবং গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফেব্রুয়ারিতে ইরান থেকে চীন প্রতিদিন গড়ে ১.৪৩ মিলিয়ন ব্যারেল জ্বালানি তেল আমদানি করেছে।
চীনে ইরানি তেল রপ্তানি প্রবাহের উপর নজরদারিকারী আরও দু’টি সূত্র থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। এক সূত্র বলছে, তাদের ধারণা মার্চ মাসে প্রতিদিন গড়ে ১.৬৭ মিলিয়ন জ্বালানি তেল ইরান থেকে আমদানি করেছে চীন। অন্য সূত্র মতে, সম্ভবত গড়ে দৈনিক ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেল জ্বালানি তেল আমদানি করেছে চীন।
কেপ্লারের তথ্য অনুসারে, মার্চ মাসে চীনের সমুদ্রপথে আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের ১৬ শতাংশই ছিল ইরানি তেল। ভার্টেক্সারের একজন জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক লি বলেছেন, ব্যবসায়ীরা অদূর ভবিষ্যতে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করেছেন। এ কারণেই ইরানি তেল কেনার ক্ষেত্রে চীন তাড়াহুড়ো করছে। ভার্টেক্সা’র রিপোর্ট অনুসারে, ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে চীনের শানডং প্রদেশে মোট অন-শোর বা স্থল মজুদ ২২ মিলিয়ন ব্যারেল বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইরান থেকে আমদানি বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।