রয়টার্স : বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজতে গিয়ে এখন শিক্ষার্থীরা শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের র্যাঙ্কিংই দেখেন না; বরং যে শহরে ওই বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত সেখানে ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ, নিরাপত্তা, আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য ও জীবনযাপনের সুযোগ-সুবিধা কেমন, তা-ও তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ বিবেচনায় এশিয়ার শহরগুলোর আধিপত্য দিনকে দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
কারণ, সাশ্রয়ী জীবনযাপনের সুযোগ, আধুনিক অবকাঠামো, আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা ও শক্তিশালী চাকরির বাজারের দিক থেকে পশ্চিমা শহরগুলোর সঙ্গে এশিয়ার শহরগুলো সমানতালে প্রতিযোগিতা করছে। শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এখন অনেক শিক্ষার্থী ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে সিউল, টোকিও, কুয়ালালামপুর কিংবা বেইজিংয়ের মতো এশীয় শহরকে প্রাধান্য দিচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস) উচ্চশিক্ষার নানা বিষয়ের ভিত্তিতে র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর তারা সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব শহর ২০২৬–এর র্যাঙ্কিং ঘোষণা করেছে। যে তালিকায় শীর্ষ দুটি স্থান দখল করেছে এশিয়ার দুই শহর—সিউল ও টোকিও। উচ্চশিক্ষার জন্য এশিয়ার সেরা ১০ শহরের তালিকায় আর কোন কোন শহর জায়গা করে নিল, তা দেখে নেওয়া যাক।
সিউল : কিউএসের র্যাঙ্কিংয়ে সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব শহরের তালিকায় লন্ডনকে সরিয়ে প্রথমবারের মতো শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে এশিয়ার শহর সিউল। ২০২৬ সালের র্যাঙ্কিংয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী শহরটি ১০০ নম্বরে পুরো ১০০ পেয়েছে, যা বৈশ্বিক শিক্ষাকাঠামোয় এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। সিউলের এ অসাধারণ ফল এসেছে শহরটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, নিরাপত্তা ও সাশ্রয়ী জীবনযাপনের প্রত্যাশিত সুযোগ ও শক্তিশালী নিয়োগ সংস্থার কার্যক্রমের সম্মিলিত সাফল্যের কারণে। সাংস্কৃতিকভাবে প্রাণবন্ত শহরটিতে শিক্ষার্থীরা অপেক্ষাকৃত কম খরচে নাগরিক জীবনের সব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। ২০২৬ সালের র্যাঙ্কিংয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী শহরটি ১০০–তে পুরো ১০০ নম্বরই পেয়েছে, যা বৈশ্বিক শিক্ষাকাঠামোয় এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। সিউলের এ অসাধারণ ফল এসেছে শহরটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, নিরাপত্তা ও সাশ্রয়ী জীবনযাপনের প্রত্যাশিত সুযোগ ও শক্তিশালী নিয়োগ সংস্থার কার্যক্রমের সম্মিলিত সাফল্যের কারণে।
টোকিও : যদি টোকিওর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা ভেবে থাকেন, তবে আপনাকে অভিনন্দন। কারণ, সিউলের পর কিউএসের তালিকায় দ্বিতীয় সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব শহর হিসেবে উঠে এসেছে এশিয়ার এ শহর। জাপানের রাজধানী শহরটি ৯৯ দশমিক ৯ পয়েন্ট পেয়ে টানা তৃতীয় বছর বিশ্বের সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব শহর হিসেবে তালিকায় নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। টোকিওতে রয়েছে বিশ্বমানের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। বসবাসের জন্য নিরাপদ শহরটির গণপরিবহনব্যবস্থা খুবই উন্নত। শহরটির সক্রিয় নিয়োগদাতারাও বিশ্বজুড়ে নজর কেড়েছে।
সিঙ্গাপুর : ছোট ও অপেক্ষাকৃত ঘনবসতিপূর্ণ নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর গত কয়েক বছরে শিক্ষা উৎকর্ষের কেন্দ্র হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছে। দেশটির শীর্ষ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়—ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর (এনইউএন) ও নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি (এনটিইউ) উভয়েই কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংয়ে ভালো অবস্থান ধরে রেখেছে। ৯০ দশমিক ৬ পয়েন্ট নিয়ে কিউএসের সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব শহরের তালিকায় ১১তম হয়েছে সিঙ্গাপুর। আর এশিয়ার সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব শহরের তালিকায় সিঙ্গাপুর রয়েছে ৩ নম্বরে। শহরটি তুলনামূলক ব্যয়বহুল হলেও উন্নত জীবনমান, নিরাপদ পরিবেশ, বিভিন্ন জাতি, ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ একসঙ্গে বসবাসের কারণে সিঙ্গাপুর বহু সংস্কৃতির শহরে পরিণত হয়েছে। টোকিওতে রয়েছে বিশ্বমানের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। বসবাসের জন্য নিরাপদ শহরটির গণপরিবহনব্যবস্থা খুবই উন্নত। শহরটির সক্রিয় নিয়োগদাতারাও বিশ্বজুড়ে নজর কেড়েছে।
কুয়ালালামপুর : ৯০ দশমিক ৩ পয়েন্ট নিয়ে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর প্রথমবারের মতো বিশ্বের সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব শহরের তালিকায় সেরা ১৫-তে উঠে এসেছে। শহরটি এবার ১১ ধাপ এগিয়ে দ্বাদশ স্থানে রয়েছে। আর এশিয়ার শহরগুলোর মধ্যে সিউল, টোকিও ও সিঙ্গাপুরের পর চতুর্থ স্থানে আছে কুয়ালালামপুর।
কিউএস যে ছয় মূল সূচকের ভিত্তিতে সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব শহরের তালিকা করে, তার চারটিতেই কুয়ালালামপুরের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এর মধ্যে নিয়োগদাতা কার্যক্রম সূচকে শক্তিশালী অবস্থানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্য ও প্রত্যাশিত জীবনযাপনের সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি রয়েছে।
৯০ দশমিক ৬ পয়েন্ট নিয়ে কিউএসের সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব শহরের তালিকায় ১১তম হয়েছে সিঙ্গাপুর। এশিয়ার সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব শহরের তালিকায় সিঙ্গাপুর রয়েছে ৩ নম্বরে। শহরটি তুলনামূলক ব্যয়বহুল হলেও উন্নত জীবন মান, নিরাপদ পরিবেশ, বিভিন্ন জাতি, ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ একসঙ্গে বসবাসের কারণে সিঙ্গাপুর বহু সংস্কৃতির শহরে পরিণত হয়েছে।
বেইজিং : ৮৯ দশমিক ৭ পয়েন্ট নিয়ে চীনের রাজধানী বেইজিং এশিয়ার সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব শহরের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে। বিশ্বসেরার তালিকায় ত্রয়োদশ স্থানে। বেইজিংয়ের দুই বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়—সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়। এ বৃত্তির নাম শোয়ার্জম্যান স্কলারস স্কলারশিপ।
তাইপে : ৮৯ দশমিক ১ পয়েন্ট নিয়ে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে এশিয়ার সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব শহরের তালিকায় ৬ নম্বরে রয়েছে, বিশ্ব তালিকায় চতুর্দশ স্থানে। শহরটিতে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা, নিরাপদ পরিবেশ ও সহনীয় জীবনযাপন ব্যয় তাইপেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
কিউএস যে ছয় মূল সূচকের ভিত্তিতে সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব শহরের তালিকা করে, তার চারটিতেই কুয়ালালামপুরের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এর মধ্যে নিয়োগদাতা কার্যক্রম সূচকে শক্তিশালী অবস্থানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্য ও প্রত্যাশিত জীবনযাপনের সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি রয়েছে।
হংকং : বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের অন্যতম গন্তব্য হতে পারে হংকং। এশিয়ার এ বাণিজ্য নগরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন উচ্চমানের শিক্ষা দেয়, তেমনি রয়েছে নানা বৃত্তির সুযোগ। বিদেশি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত বিকাশের জন্যও রয়েছে নানা সুযোগ।
চীনের স্বায়ত্তশাসিত শহরটি ৮৮ দশমিক ৩ পয়েন্ট নিয়ে কিউএসের সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব এশীয় শহরের তালিকায় ৭ নম্বরে রয়েছে।