তাসনিম,রয়টার্স, এএফপি: নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহর অকল্যান্ডের হাজারো মানুষ ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। আয়োজকেরা বলছেন, গাজায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটি এ ধরনের সবচেয়ে বড় সমাবেশ।

গতকাল শনিবার সকালে অকল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে ‘মার্চ ফর হিউম্যানিটি’ শীর্ষক সমাবেশটির আয়োজন করা হয়। ‘আওতেরোয়া ফর প্যালেস্টাইন’ নামের একটি সংগঠন এটি আয়োজন করে। তারা বলছে, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। তবে পুলিশ বলছে, এ সংখ্যা ২০ হাজারের মতো। সংগঠনের মুখপাত্র আরামা রাটা বলেন, গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর এটি ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানিয়ে নিউজিল্যান্ডে হওয়া সবচেয়ে বড় সমাবেশ। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডব শুরু হয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম রেডিও নিউজিল্যান্ড বলেছে, অনেক মানুষ ফিলিস্তিনি পতাকা ও ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন। সেগুলোতে লেখা ছিল ‘জাতিহত্যাকে স্বাভাবিকভাবে নিও না’, ‘সাহস দেখাও, ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াও।’ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। মানবিক সংস্থাগুলো বলেছে, খাবারের ঘাটতির কারণে ব্যাপক হারে অনাহারে থাকার ঘটনা ঘটছে।

নিউজিল্যান্ডের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম রেডিও নিউজিল্যান্ড বলেছে, অনেক মানুষ ফিলিস্তিনি পতাকা ও ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন। সেগুলোতে লেখা ছিল ‘জাতি হত্যাকে স্বাভাবিকভাবে নিও না’, ‘সাহস দেখাও, ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াও।’ আয়োজকেরা সমাবেশ চলাকালে শহরের একটি বড় সেতু বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। গত আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে হারবার ব্রিজ আটকে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এমন পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শুক্রবার তাঁরা সেই পরিকল্পনা বাদ দেন। পুলিশ বলেছে, সমাবেশ থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথগুলো খোলা ছিল।

‘আওতেরোয়া ফর প্যালেস্টাইন’ নামের সংগঠনটি চায়, নিউজিল্যান্ডের মধ্য ডানপন্থী জোট সরকার ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুক। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন গত আগস্ট মাসে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড এবং সেখানকার মানবিক সহায়তার ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়েও ভাবছে নিউজিল্যান্ড সরকার। নিউজিল্যান্ডের জিউইশ কাউন্সিল দেশটিতে বসবাসকারী প্রায় ১০ হাজার ইহুদির প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। আজকের বিক্ষোভের বিষয়ে কাউন্সিলের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছিল । তবে সাড়া পাওয়া যায়নি।

গাজার সমর্থনে ইয়েমেনে ব্যাপক বিক্ষোভ : গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে সাপ্তাহিক কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার ইয়েমেনজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। দেশটির রাজধানী সানার সাবিইন চত্ত্বরে সবচেয়ে বেশি মানুষের জমায়েত দেখা যায়। এই সপ্তাহে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতের প্ল্যাকার্ডে কিছু লেখার মধ্যে ছিল, 'শহীদদের প্রতি অঙ্গীকার, কোনও কিছুর বিনিময়েই গাজার প্রতি সমর্থন থেকে পিছু হটব না'। বিক্ষোভের আয়োজকদের তরফ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, পবিত্র রক্ত ঝরিয়ে নৈতিক অবস্থানের মূল্য চুকাতে হয়। কিন্তু এর ফল হচ্ছে নিশ্চিত বিজয়, যা এই জনমের পরেও থাকবে বিরাজমান।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশ্বে যে কোনও অংশে মুসলিম উম্মাহর ওপর আগ্রাসন মানে হচ্ছে সকলের ওপর হামলা। যে কোনও দেশের আত্মোৎসর্গকারী আমাদের শহীদ। এছাড়া, সম্প্রতি কাতারের মাটিতে হামাস নেতাদের ওপর সংঘটিত ইসরায়েলি হামলা ও কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের নিন্দা জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।