বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিলে স্বাক্ষর করেছেন ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু। এর ফলে সংসদে পাস হওয়া বিলটি আইনে পরিণত হলো। এর আগে, গত বুধবার গভীর রাতে সরকার ও বিরোধী পক্ষের দীর্ঘ বিতর্কের পরে লোকসভায় ৫৬ ভোটের ব্যবধানে পাস হয় ওয়াকফ সংশোধনী বিল। এনডিটিভি, আনন্দবাজার।

বিলটির পক্ষে ছিল ২৮৮টি ভোট আর বিপক্ষে ২৩২টি। এর পরে ১২৮-৯৫ ভোটে রাজ্যসভায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পাস হয়েছিল এই সংশোধনী বিল। পরে লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাস হওয়া বিল অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতি ভবনে। শনিবার প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর স্বাক্ষরের পর বিলটি আইনে পরিণত হলো। ভারত সরকারের গেজেটিয়রে ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে সংশোধনী আইনের বিজ্ঞপ্তি।

সংশোধিত আইন অনুযায়ী ‘ওয়াকফ’ শব্দের অর্থ ‘ঐক্যবদ্ধ ওয়াকফ ব্যবস্থাপনা, ক্ষমতায়ন, দক্ষতা ও উন্নয়ন’। নতুন আইন অনুসারে, তাই কোনও জমি ওয়াকফ কি না, সেই সম্পর্কিত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক। বোর্ডে এ বার থেকে থাকতে পারবেন অমুসলিম প্রতিনিধিরাও। তবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারেরও নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

উল্লেখ্য, লোকসভায় দীর্ঘ ১৩ এবং রাজ্যসভায় দীর্ঘ ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিতর্ক চলার পরে উভয় কক্ষে পাস হয়েছিল সংশোধনী বিল। অবশেষে তা আইনে পরিণত হল। বিলটি মুসলিমদের দান করা মসজিদ, মাদ্রাসা, আশ্রয় কেন্দ্র এবং ভূমির মতো সম্পত্তিগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে। বিরোধীরা দাবি করছে, বিলটি সরকারকে এই সম্পত্তিগুলোর ওপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ দেয় এবং মুসলিম ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপের পথ খুলে দেয়।

এদিকে বিতর্কিত (সংশোধিত) ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে আন্দোলন করবে অল ইন্ডিয়ান মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি)। যতদিন পর্যন্ত এই বিল রহিত না করা হবে ততদিন এ আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সব ধর্ম, কমিউনিটিভিত্তিক এবং সামাজিক সংগঠনকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোটের সমালোচনা করে সংস্থাটি বলেছে এ জোটের সঙ্গে থাকা দল জেডি (ইউ), টিডিপি এবং এলজেপি (রামবিলাশ) পার্লামেন্টে ওয়াকফ বিলে সমর্থন জানিয়েছে। এর মাধ্যমে এ দলগুলো তাদের কথিত ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ খুলে দিয়েছে। ‘নিপীড়নমূলক এ সংশোধনী’-র বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ী যা যা করা যায় তার সবই করা হবে বলে মুসলিমদের আশ্বস্ত করেছে সংস্থাটি। এছাড়া এ বিল নিয়ে কোনো মুসলিমকে হতাশাগ্রস্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। বিতর্কিত এ ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টের দারস্থই হবে না ভারতীয় মুসলিমরা। এটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রাম অব্যাহত রাখা হবে। পবিত্র ঈদুল আযহার পর তারা আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপের ঘোষণা দেবেন।

ভারতে ২৫টির বেশি ওয়াকফ বোর্ড রয়েছে। যাদের অধীনে আছে ৮৫ হাজার সম্পত্তি এবং ৯ লাখ একর জমি। মুসলিমরা ধর্মীয় ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে যেসব জমি বা সম্পদ দান করেন সেগুলো ওয়াকফ হিসেবে পরিচিত। এই জমি বেচা বা কেনা যায় না। আর এগুলোর তদারিক করে থাকে মুসলিমরাই। তবে বিতর্তিক ওয়াকফ বিলে ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুসলিমদের আশঙ্কা এরমাধ্যমে তাদের সম্পদ কুক্ষিগত করার পরিকল্পনা করছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার। সংশোধনী ওয়াকফ বিলটিতে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার ১২৮ সদস্য পক্ষে ভোট দেন। বিপক্ষে দেন ৯৫ জন। এরপর এটি লোকসভায় ২৮৮/২৩২ ভোটে পাস হয়। সবশেষে রাষ্ট্রপতি দ্রুপদি মুর্মু এটির অনুমোদন দেন। এতে বিতর্কিত এ বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে আইনে পরিণত হয়।