এশিয়া
পারমাণবিক আলোচনায় ইরানের পাশে রয়েছে চীন-রাশিয়া
তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনা দাবির প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রতি নিজেদের সমর্থন জানিয়েছে চীন ও রাশিয়া। গতকাল শুক্রবার দেশদুটির শীর্ষ কূটনীতিবিদরা জানিয়েছেন, ইরানের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
Printed Edition

১৪ মার্চ, রয়টার্স : তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনা দাবির প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রতি নিজেদের সমর্থন জানিয়েছে চীন ও রাশিয়া। গতকাল শুক্রবার দেশদুটির শীর্ষ কূটনীতিবিদরা জানিয়েছেন, ইরানের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতেই কেবল আলোচনা হতে পারে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বেইজিংয়ে আয়োজিত তিন দেশের বৈঠক শেষে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওজু বলেছেন, ইরানের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের মূল কারণ খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের এগিয়ে আসা উচিত। নিষেধাজ্ঞা, চাপ প্রয়োগ বা হুমকি ধামকি দেওয়া বন্ধ করে আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে ইরান, চীন ও রাশিয়া।
তিনি আরও বলেছেন, একতরফা অন্যায় সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার বিষয়ে একমত হয়েছে মস্কো, বেইজিং ও তেহরান। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে পারমাণবিক কর্মসূচির আওতা হ্রাস করতে সম্মত প্রায় এক দশক আগে একটি চুক্তি করেছিল ইরান। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি। তবে ২০১৮ সালে নিজের প্রথম মেয়াদে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন।
বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে বেইজিং ও মস্কোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের উদ্দেশে পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনার দাবি করে আসছে ইরান। তাদের এই বক্তব্যকে স্বাগত জানায় চীন ও রাশিয়া। শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য ইরানের পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকারকে সম্মান করা উচিত। ওই বৈঠকে চীনা উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যোগ দেন রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকোভ এবং ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম ঘারিবাবাদি। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে চীনে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে এক চিঠি দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। সেসময় তিনি মন্তব্য করেন, ইরানকে সামলানোর কেবল দুটো পদ্ধতি আছে, একটি হলো সামরিকভাবে এবং অন্যটি চুক্তি করে।
এর জবাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির পরোয়া করেন না তিনি। এভাবে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করা যাবে না। চলতি সপ্তাহে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ছয় সদস্যের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আরও অসন্তুষ্ট হয়েছে তেহরান। এই সদস্যরা হলো- যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, গ্রিস, পানামা, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রিটেন। এই রুদ্ধদ্বার বৈঠককে নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতার অপব্যবহার বলে তিরস্কার করেছে তেহরান।
উল্লেখ্য, ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে দেশটির সরকার। তবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ গত মাসে দাবি করেছে, ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণের হার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করেছে তেহরান। এই হার যদি প্রায় ৯০ শতাংশে পৌঁছায় তবে সেটি পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে ব্যবহার করা যায়। কয়েক মাস আগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের হার প্রায় ৬০ শতাংশ ছাড়িয়েছে ইরান।