ফক্স নিউজ, রয়টার্স , বিবিসি: ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আবারও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। গত শনিবার রাতে তেল আবিবের রাস্তায় নেমে আসেন হাজারো বিক্ষোভকারী। প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধ আরও বাড়াতে নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার বিরোধিতা করেন তারা। এসময় এই যুদ্ধের তাৎক্ষণিক অবসান এবং বন্দিদের মুক্তির দাবি জানান তারা। এর একদিন আগে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা উপত্যকা দখলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাপক জনবিরোধিতা এবং সামরিক বাহিনীর সতর্কবার্তা সত্ত্বেও ধ্বংসপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পদক্ষেপ বন্দিদের জীবনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিক্ষোভকারীরা।

হামাসের হাতে বন্দি ওমরি মিরানের স্ত্রী লিশাই মিরান লাভি বলেন, ‘এটি শুধু একটি সামরিক সিদ্ধান্ত নয়। এটি আমাদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের জন্য মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুদ্ধের তাৎক্ষণিক অবসানে হস্তক্ষেপ করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিপুল সংখ্যক ইসরায়েলি যুদ্ধের তাৎক্ষণিক অবসান চায় যাতে গাজায় সশস্ত্র যোদ্ধাদের হাতে থাকা অবশিষ্ট ৫০ জন বন্দিকে মুক্ত করা যায়। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, প্রায় ২০ জন বন্দি এখনও জীবিত। যুদ্ধ সম্প্রসারণের ঘোষণা দেওয়ায় ইসরায়েলি সরকার দেশ-বিদেশে, এমনকি তাদের নিকটতম কিছু ইউরোপীয় মিত্রের কাছ থেকেও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। পুরো মন্ত্রিসভা রবিবারই এই পদক্ষেপের অনুমোদন দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে-সব বন্দি মুক্তি পেয়েছেন,তাদের বেশিরভাগই কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে মুক্ত হয়েছেন। জুলাই মাসে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা ভেঙে যায়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, আলোচনার মাধ্যমে আরও বন্দি মুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারত।

৬৯ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী অবসরপ্রাপ্ত রামি দার বলে, ‘নেতানিয়াহু সরকার উগ্রপন্থি। তারা দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ করছে।’ তেল আবিবের বাইরের একটি শহরতলি থেকে এসে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের প্রতি বন্দি মুক্তির জন্য একটি চুক্তি বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানান তিনি। গত শনিবারের বিক্ষোভে আয়োজকদের হিসাবে এক লাখের বেশি মানুষ অংশ নেন। ৪৫ বছর বয়সী ইয়ানা স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি বিশেষজ্ঞ নই, কিন্তু আমার মনে হয় দুই বছরের লড়াইয়ের পরও কোনও সাফল্য আসেনি।’ বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পতাকা ও বন্দিদের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন। অনেকে সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা বা ট্রাম্পকে নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে বিরত রাখতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাইন করা পোস্টার ধরেছিলেন। কিছু বিক্ষোভকারী ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত গাজার শিশুদের ছবি বহন করছিলেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এই যুদ্ধে ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন,সামরিক বাহিনী সমগ্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়, তবে ইসরায়েল ওই ভূখণ্ড রাখতে চায় না। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৫৫ বছর বয়সী শিক্ষক তাল বলেন, ‘যুদ্ধ সম্প্রসারণ ভয়াবহ হবে। এতে সেনা ও বন্দি উভয়ের মৃত্যু ঘটবে। তাছাড়া গাজায় আমাদের কিছু করার নেই। এটি আমাদের নয়।’