আল জাজিরা, এএফপি, আনাদোলুর : ফিলিস্তিনে গণহত্যা ঠেকাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যথেষ্ট কিছু করছে না বলে অভিযোগ করেছে স্পেন। একইসঙ্গে গণহত্যার দায়ে সরাসরি ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছে দেশটি। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বুধবার ফিলিস্তিনে গণহত্যার দায়ে সরাসরি ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছেন এবং বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এই মানবিক সংকট ঠেকাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। স্পেনের সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, কোনো দেশ যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৌলিক নীতিকে পদদলিত করে কিংবা অনাহার ও যুদ্ধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে একটি বৈধ রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে চায়, তবে সেই দেশ ইউরোপের অংশীদার হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার যে কার্যক্রম চালাচ্ছে, তা ইতিহাসে ‘২১শ শতকের অন্যতম অন্ধকারতম অধ্যায়’ হিসেবে বিবেচিত হবে। সানচেজ বলেন, যে কারণে আমরা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালানোর জন্য দোষারোপ করি, সেই একই অপরাধ যদি নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনে করেন, তাহলে আমরা তাকে ছাড় দিতে পারি না। তিনি বলেন, যেসব মর্মান্তিক ছবি আমরা প্রতিদিন দেখছি — ধ্বংসস্তূপে পরিবারকে খুঁজে বেড়ানো শিশু, তীব্র খাদ্যসংকটে তাঁবুতে নিঃশ্বাসত্যাগ করা মানুষÑ এগুলো কেবল আমাদের আবেগে আঘাত করা বা বিব্রত হওয়ার জন্য নয়। এই দৃশ্যগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে ইউরোপকে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা উচিত। হামলায় নিহত ৭৪ : ফিলিস্তিনের গাজা থেকে আরও ১০ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হামাস। ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এই ১০ জিম্মিকে মুক্তি দিতে চায় সংগঠনটি। হামাসের পক্ষ থেকে গত বুধবার যখন এমনটা জানানো হয়েছে, তখনো গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর হামলা হয়েছে। এসব হামলায় অন্তত ৭৪ জনের নিহত হওয়ার খবর জানা গেছে। শিগগিরই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে বলে আবারও আশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

হামাস সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইসরাইলিদের ‘একগুঁয়েমি’ মনোভাব যুদ্ধবিরতির চলমান আলোচনাকে ‘কঠিন’ করে তুলতে পারে। সংগঠনটি জানিয়েছে, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত যুদ্ধবিরতি আলোচনায় এখনো বেশ কিছু বিষয়ে দ্বিধা রয়ে গেছে। এর মধ্যে জরুরি সহায়তা দেওয়া, গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রকৃত নিশ্চয়তার মতো বিষয়গুলো রয়েছে। হামাসের কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু বলেন, ‘হামাস সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের জনগণকে রক্ষা করা, গণহত্যার অপরাধ বন্ধ করা ও যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের জনগণের অবাধ ও মর্যাদাপূর্ণ চলাফেরা নিশ্চিত করা এবং সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নমনীয়তা দেখাতে বলা হয়েছে।’

তাহের আল–নুনু আরও বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের শর্ত মেনে ইসরাইলি সেনাদের যেসব এলাকা থেকে সরে যেতে হবে, সেগুলো এমনভাবে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ফিলিস্তিনিদের জীবন প্রভাবিত না হয়। একই সঙ্গে যাতে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার পথ প্রশস্ত থাকে। এদিকে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে এ সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দুই দফা সাক্ষাৎ করেছেন। গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করে বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘খুব ভালো সুযোগ’ তৈরি হয়েছে।