DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

এশিয়া

গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ করলো ইসরাইল

ইসরাইলী সরকার বলেছে, তারা গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ায় গতকাল রোববার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারাপ্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন

Printed Edition
Gaza-Truck

২ মার্চ, বিবিসি : ইসরাইলী সরকার বলেছে, তারা গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ায় গতকাল রোববার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারাপ্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবিত সাময়িক যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণের প্রস্তাব এখনও গ্রহণ করেনি হামাস। কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আজ রবিবার সকাল থেকেই গাজায় সমস্ত পণ্য ও ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। হামাস যদি তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করে,তাহলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলে তা রমজানের সময়সীমা শেষ হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ৩১ মার্চ এবং ইহুদিদের অনুষ্ঠান পাসওভার শেষ হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ২০ এপ্রিল পর্যন্ত লড়াই বন্ধ হতো। হামাসের এক মুখপাত্র এই সিদ্ধান্তকে ‘সস্তা ব্ল্যাকমেইল’ এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থান’ বলে অভিহিত করেছেন। সেই সঙ্গে মধ্যস্থতাকারীদের আহ্বান জানিয়েছেন যাতে তারা ইসরাইলকে মানবিক সহায়তা সরবরাহ পুনরায় শুরু করতে বাধ্য করে। হামাস চায়, চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ মূল আলোচনার মতোই এগিয়ে যাক, যাতে জিম্মি বিনিময়, ফিলিস্তিনী বন্দিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরাইলী বাহিনীর প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইতিপূর্বে তারা বলেছিল,যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের নিশ্চয়তা ছাড়া তারা প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণে রাজি হবে না।

হামাসের মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় সহায়তা প্রবেশ বন্ধের এই সিদ্ধান্ত আবারও ইসরাইলী দখলদারিত্বের কুৎসিত রূপ প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ইসরাইল সরকারকে আমাদের জনগণকে অনাহারে রাখা বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়া। গতরাতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে,ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে যেখানে রমজান এবং ইহুদিদের পাসওভার সময়কালে প্রায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদি এই সময়সীমার শেষে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি না হয়,তাহলে ইসরাইল আবার যুদ্ধ শুরু করার অধিকার সংরক্ষণ করবে। মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ তার প্রস্তাব প্রকাশ করেননি। ইসরাইলী পক্ষের মতে,প্রস্তাবটি প্রথমে জীবিত ও মৃতদের মধ্যে অর্ধেক জিম্মির মুক্তির মাধ্যমে শুরু হবে। উইটকফ ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কারণ তিনি মনে করেন যে যুদ্ধের অবসানের শর্ত নিয়ে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে মতপার্থক্য কমানোর জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, হামাস যদি ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণের বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে, তবে ইসরাইল সঙ্গে সঙ্গেই আলোচনায় বসবে। প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয়েছিল। শনিবার তা শেষ হয়েছে। এই সময়ে হামাস ও ইসরাইলী সেনাদের মধ্যে ১৫ মাসের লড়াই বন্ধ ছিল। এর ফলে ৩৩ ইসরাইলী এবং ৫ থাই জিম্মির বিনিময়ে প্রায় ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনী বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়।

পণবন্দিদের নিয়ে নতুন ভিডিও প্রকাশ হামাসের :

গাজায় আটক ইসরাইলী পণবন্দিদের নিয়ে নতুন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড। শনিবার ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়। এমন সময়ে গোষ্ঠীটি পণবন্দিদের নতুন ভিডিও সামনে আনল যখন সাময়কি যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্ব শেষ হতে যাচ্ছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিডিওটিতে কয়েকজন পণবন্দিকে দেখা গেছে। তবে এটি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। আল-কাসাম ব্রিগেডের প্রকাশিত ভিডিওতে ইসরাইলী জিম্মি ৪৬ বছর বয়সী ইয়ার হর্নকে দেখা যায়, যাকে দুই সপ্তাহ আগে বন্দীদশা থেকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। তার ছোট ভাই ৩৮ বছর বয়সী এইতানকে বিদায় জানাচ্ছেন, যিনি এখনও গাজা উপত্যকায় বন্দী।

ভিডিওটির সঙ্গে একটি বার্তা ছিল, “শুধুমাত্র একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি তাদের জীবিত ফিরিয়ে আনতে পারে।”

ভিডিওটি আরও দু’জন ব্যক্তির ছবি দেখিয়েছে, যাদের মুখ ব্লার করা ছিল। এই ভিডিওটি, যা হামাসের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়েছে, ফিলিস্তিনের বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে ইসরাইলী সরকারের প্রতি চাপ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এক নতুন পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি প্রকাশের পর ইসরাইলী জিম্মিদের পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে এর আগেও হামাসের প্রকাশিত ভিডিওগুলো ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

এই ভিডিওটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে প্রকাশিত হয়েছে, যখন ইসরাইলী কর্মকর্তারা কাতারে হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময় এবং যুদ্ধবিরতি আলোচনা করতে সমঝোতা চেষ্টা করছে। নতুন করে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়ের বিষয়টি এখনও প্রাথমিক স্তরে, কিন্তু এই ভিডিও হামাসের পক্ষ থেকে নতুন বার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে, যা ভবিষ্যতে বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। ভিডিওটির মাধ্যমে হামাস এক ধরণের আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়, যা তাদের অবস্থান ও দাবির প্রতি সমর্থন যোগাতে সহায়ক হতে পারে। হামাসের পক্ষ থেকে এই ধরনের প্রচারণা ইসরাইলী সরকারের জন্য নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি ভবিষ্যতে উভয় পক্ষের মধ্যে আরও আলোচনা ও সমঝোতার পথ সুগম করতে পারে।