তাস, এএফপি, এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড: রাশিয়ার উন্নত ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ইউক্রেনের কোনো কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সংস্থা রোস্তেক। গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা।

রোস্তেক জানিয়েছে, শত্রুপক্ষ ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত ঠেকাতে অক্ষম। এই ক্ষেপণাস্ত্র অত্যন্ত জটিল ও অপ্রত্যাশিত পথে এবং প্রচণ্ড গতিতে উড়ে যায়। এর চলার সময় যে ঝাঁকুনি ও চাপ তৈরি হয়, তা পশ্চিমা সামরিক জোটের তৈরি অধিকাংশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের সহনক্ষমতার চেয়েও অনেক বেশি।

রুশ সংস্থাটি আরও জানায়, ইউক্রেনের কোনো ব্যবস্থা নেই যা দিয়ে এই ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা যায়। শত্রুপক্ষ কেবল এদের গতিপথ লক্ষ্য করতে পারে এবং নিশ্চিত ধ্বংসের অপেক্ষা করতে হয়।

ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কি?

ইস্কান্দার-এম নামের এই স্বল্প দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটি মূলত একাধিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করার জন্য তৈরি। এর আওতায় রয়েছে রকেট নিক্ষেপ ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা ঘাঁটি, বিমানঘাঁটিতে থাকা যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার, সামরিক দপ্তর এবং কৌশলগত অবকাঠামো।

একটি ইস্কান্দার দলভুক্ত ইউনিটে ৫০টিরও বেশি ধরনের যানবাহন ও সরঞ্জাম থাকে, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপকারী যান, ক্ষেপণাস্ত্র পরিবাহী যান, কমান্ড যান এবং রক্ষণাবেক্ষণকারী যানবাহন। এই ব্যবস্থা থেকে উভয় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র Í অর্থাৎ সরল পথে গমনকারী এবং ঘুরপথে আঘাতকারী, নিক্ষেপ করা যায় এবং তা প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

পুতিনের হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বহনকারী হেলিকপ্টারকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। তবে রাশিয়ার আকাশ সুরক্ষা ব্যবস্থা বা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ঠিক সময়ে সেই হামলা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে।

রাশিয়ার এয়ার ডিফেন্স ইউনিট কমান্ডার ইউরি দাশকিন রুশ জানিয়েছেন এ তথ্য। রোববার আরবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাশকিন বলেন, গত ২০ মে ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রুশ প্রদেশ ক্রুস্ক সফরে গিয়েছিলেন পুতিন। গত কয়েক মাস ধরে ক্রুস্কে ব্যাপক সংঘাত চলছে রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে।

আরবিসিকে কমান্ডার দাশকিন বলেন, ২০ মে সফর শেষ করে একই দিন রাজধানী মস্কোতে ফিরে আসছিলেন পুতিন, সে সময়ই তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারকে লক্ষ্য করে একের পর এক ড্রোন নিক্ষেপ করা শুরু করে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে রাশিয়ার এয়ার ডিফেন্স ইউনিট প্রতিটি ড্রোনকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করেছে।

“সেদিন ক্রুস্কের আকাশে ৪৬টি ড্রোন ছুড়েছিল ইউক্রেনীয় বাহিনী। এটি ছিল পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত একটি হামলা এবং এর মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্র ছিল প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার। প্রতিটি ড্রোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার বেশ আগেই আমরা ধ্বংস করেছি। হেলিকপ্টারের গায়ে একটি আঁচড়ও লাগেনি।”

তিনি আরও জানিয়েছেন, গত ২০ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত রাজস্থানী মস্কোসহ বিভিন্ন শহরের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে মোট ১ হাজার ১৭০টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে প্রতিটি ড্রোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করে ফেলায় রাশিয়ায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ব্যাপক এই ড্রোন হামলার পর শনি ও রোববার ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে মস্কোও। এতে রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে মোট ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।