ইন্টারনেট: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টা ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে ইউরোপের নানা শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির ঘোষণার পর অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কায় মানুষ রাজপথে নেমে আসে। গত শনিবার জার্মানির বার্লিন ও ফ্রাঙ্কফুর্ট, ফ্রান্সের প্যারিস এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একযোগে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এসব বিক্ষোভে অংশ নেয়া অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী নাগরিক, যারা মূলত ডেমোক্র্যাট দলের সমর্থক।
ফ্রাঙ্কফুর্টে আয়োজিত ‘হ্যান্ডস অফ’ নামে এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের পদত্যাগের দাবি জানান। তাঁদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘গণতন্ত্র রক্ষা করুন’, ‘আমাদের নিজের মতো চলতে দিন’ ও ‘ট্রাম্প, তোমার কর্মকাণ্ডে বিশ্ব ক্লান্তÍতুমি চলে যাও’। বার্লিনে টেসলার বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে ইলন মাস্কের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন। তারা বলেন, ‘ইলন, তোমাকে কেউ ভোট দেয়নি।’
প্যারিসের প্যালেস দে লা রিপাবলিকে প্রায় দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী সমবেত হন। তাঁদের অনেকের হাতে দেখা গেছেÍ‘অত্যাচারীকে প্রতিহত করুন’, ‘আইনের শাসন বজায় রাখুন’ ও ‘গণতন্ত্র রক্ষা করুন’ লেখা ব্যানার। এছাড়া লন্ডন ও পর্তুগালের লিসবনসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি শহরে একই ধরনের ট্রাম্প ও মাস্কবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীরা মার্কিন প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে তাদের অসন্তোষ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী সর্ববৃহৎ সমাবেশ: ‘যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না’, ‘ডেমক্র্যাসি নট ডিক্টেটরশিপ’, ‘আমাদের দেশ কোন দিকে যাচ্ছে’, ‘ডিওজিইকে চাকরিচ্যুত করুন’, ‘মাস্ককে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দিন’, ‘যুক্তরাষ্ট্রে কোনো রাজা নেই’, ‘রাজতন্ত্র মানি নাÍমানবো না’, ‘মাস্ককে বিতাড়িত করুন’ ইত্যাদি স্লোগানে গোটা আমেরিকা প্রকম্পিত হয়েছে।
ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই এবং প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহারের অভিযোগসহ বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ৫ এপ্রিল শনিবার এ বিক্ষোভ হয়। ৫০টি স্টেটে প্রায় ১ হাজার ২০০ বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এক দিনে এটিই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।
এদিন ওয়াশিংটনের আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, ছিল হালকা বৃষ্টিও। এরই মধ্যে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হন। ওয়াশিংটনের কানেকটিকাট অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষোভকারীদের লাইন শহরের ন্যাশনাল মল এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়েছিল। তাদের হাতে ছিল ট্রাম্পের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ সম্বলিত প্ল্যাকার্ড।
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির মতো নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, টেক্সাস, মিশিগান, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, শিকাগো, বস্টন, ফিলাডেলফিয়া, কানেকটিকাট, নিউজার্সি, আরিজোনা, মিনেসোটা, আলাবামা, ওরেগন, ক্যানসাস, কেন্টাকি, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, ডেলাওয়ার, ওহাইও, আইওয়া, সিয়াটল, নর্থ ক্যারোলাইনা, সাউথ ক্যারোলাইনা, উইসকনসিন, নিউ হ্যামশায়ার, রোড আইল্যান্ড, সান ফ্রান্সিসকোসহ বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ আমেরিকান ‘হ্যান্ডস অফ’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। ট্রাম্প ও ইলন মাস্ককে কড়া বার্তা দেন তারা।
এর আগে ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারিতে প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার দিন বিশাল প্রতিবাদ হয়েছিল। জর্জ ফ্লয়েড হত্যার পর ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের মতোই ৫ এপ্রিল শনিবারের ‘হ্যান্ডস অফ’ কর্মসূচিকে আরও বড় বলে উল্লেখ করেছে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন মিডিয়াগুলো। কারণ, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে শুধু অভিবাসী সমাজই নয়, খেটে খাওয়া আমেরিকানরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ইলন মাস্কের পরামর্শে ফেডারেল অফিসে কয়েক লাখ কর্মচারী ছাঁটাইয়ের ঘটনায় হতভম্ব সাধারণ নাগরিকেরা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত, ক্ষুব্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের কী হতে পারে, তা ভেবে আমরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ছি।’
বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয় ‘হ্যান্ডস অফ’। এর একটি অর্থ হতে পারে, ‘আমাদের নিজের মতো চলতে দাও’। বিক্ষোভে দেড়শটির মতো গোষ্ঠী অংশ নেয়, যার একটি ‘ইনডিভিজিবল’। গোষ্ঠীটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন গণমাধ্যমে বলেন, এই বিক্ষোভের মাধ্যমে ট্রাম্প, ইলন মাস্ক, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ও তাদের মিত্রদের পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।
গত ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্প নতুনভাবে সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) গঠন করে এর দায়িত্ব দেন বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ককে। এরপর থেকেই মাস্কের দলের হাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ২৩ লাখ কর্মচারীর মধ্যে ২ লাখের বেশি পদ শূন্য হয়েছে। শুক্রবারও মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের বাইরে শত শত মানুষ অবস্থান নেন। সংস্থাটি সম্প্রতি ডিওজিইর বড় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। সাত হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ।
হোয়াইট হাউসের সন্নিকটে ন্যাশনাল মলের সমাবেশে বক্তব্য দেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কয়েকজন কংগ্রেসম্যান। তারা অভিযোগ করেন, নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থে আমেরিকানদের জিম্মি করেছেন ট্রাম্প ও মাস্ক। এমন পরিস্থিতিকে আর চলতে দেওয়া যাবে না। ২০ জানুয়ারি থেকে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে শুরু করেছেন। তার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তোষ প্রকাশের মাধ্যম হয়ে উঠেছে ‘হ্যান্ডস অফ’ প্রতিবাদ।