ইউরোপ
যুক্তরাষ্ট্রের ভরসায় না থেকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে ইই
দ্বিতীয় দফায় ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বদলে গেছে অনেক সমীকরণ। ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর বন্ধ হয়ে গেছে ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক ও আর্থিক সহায়তা।
Printed Edition

৬ মার্চ, ডয়চে ভেলে : দ্বিতীয় দফায় ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বদলে গেছে অনেক সমীকরণ। ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর বন্ধ হয়ে গেছে ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক ও আর্থিক সহায়তা। হুমকির মুখে ন্যাটো। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আর ভরসা না করে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয় নিয়ে ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নেতাদের বৈঠকে ৮০ হাজার কোটি ইউরোর নিরাপত্তা পরিকল্পনা পেশ করবেন ইউরোপীয় কমিশনের উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন। ইউরোপীয় কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘এটা ইউরোপের মুহূর্ত, আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ইইউ-র সামনে নিজেদের সুরক্ষা বাড়িয়ে সামরিক ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। কয়েকদিন আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর ডাকা বৈঠকে, গত রবিবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের ডাকা বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন ইউরোপের দেশগুলোর শীর্ষনেতারা।
এবার উরসুলা ৮০ হাজার কোটি ইউরোর ‘রিআর্ম ইউরোপ’ পরিকল্পনা পেশ করছেন। উরসুলা ইউরোপের নেতাদের চিঠি দিয়ে বলেছেন, ‘পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক খারাপ। আমাদের জীবনকালে এরকম বিপদ আগে আসেনি। প্রবল ঝুঁকির মুখে পড়েছে স্বাধীন ও সার্বভৌম ইউক্রেন এবং ইউরোপের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি।’ উরসুলার আশা, তার এই পরিকল্পনা ইউরোপের দেশগুলোর প্রতিরক্ষা বাজেটের চরিত্র বদলাবে। অতীতে বিভিন্ন দেশের সরকার আর্থিক অসুবিধার কারণ দেখিয়ে বাজেট বরাদ্দ কম রাখত। ইউরোপের দেশগুলোতে জিডিপি’র সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সেই সীমা বাড়াবার প্রস্তাব রয়েছে উরসুলার প্রস্তাবে। এর ফলে আগামী চার বছরে সামরিক খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৬৫০ কোটি টাকা বেড়ে যাবে।
ইইউ’র বাজেটে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ইইউ’র কিছু দেশের আপত্তি আছে। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই অর্থ দিয়ে মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম, ড্রোন, সাইবার প্রস্তুতি বাড়ানো হবে। এই বিষয়গুলোতে ইউরোপ এখন আমেরিকার উপর নির্ভরশীল। এক প্রবীণ ইইউ কর্মকর্তা বলেছেন, নেতারা দ্রুত এই প্রস্তাবের রূপায়ণ চান। তাহলেই ইইউ’র পক্ষে নিজেদের জন্য সুরক্ষা জোরদার করা সম্ভব হবে।
এদিকে, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া ইঙ্গিত দিয়েছে, ইউক্রেনকে সাহায্য করা নিয়ে তাদের আপত্তি আছে। স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো এই বিষয়টি উল্লেখ করে একটি চিঠি লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, স্লোভাকিয়া এই পরিকল্পনা ব্লক করবে না, কিন্তু তারা কোনো অর্থ দিতে পারবে না। এই পরিকল্পনা নিয়ে সুইডেনের দ্বিধা ছিল। তবে সুইডিশ ডিফেন্স রিসার্চ এজেন্সির গবেষক ক্যালে হ্যাকানসন বলেছেন, কয়েকদিন ধরে সুইডেনের মনোভাবে একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর তাদের মনোভাবে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। হ্যাকানসন বলেছেন, সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টেরসন বলেছেন, তিনি উরসুলার পরিকল্পনা সমর্থন করেন। ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও জার্মানিরও দ্বিধা ছিল, কিন্তু তারা তাদের অবস্থান বদল করেছে। উরসুলা এই পরিকল্পনার কথা জানানোর কয়েক ঘণ্টা আগে সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস জানিয়েছেন, তারা প্রতিরক্ষা ও পরিকাঠামো খাতে পাঁচ হাজার কোটি ইউরো করে বেশি বিনিয়োগ করবেন।