ইউরোপের শ্রমবাজারে গত ৩০ বছরে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটেছে। ১৯৯৫ সালের পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) নেট হিসাবে প্রায় ৩ কোটি নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে। অথচ ২০০৯ সাল থেকে ইইউর কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী প্রায় ১ কোটি কমেছে। এই পরিবর্তন ইউরোপের শ্রমবাজারে গভীর ও চলমান কাঠামোগত রূপান্তরের ইঙ্গিত দেয়।

ইউরোফাউন্ড-এর নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চাকরির প্রবৃদ্ধি উৎপাদনশীলতার সমান হারে বাড়েনি। বরং ইউরোপের উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধি অন্যান্য উন্নত অঞ্চলের তুলনায় অনেক ধীর। এটি ইইউর প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেবা খাতেই বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি : এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইইউর ২৭টি সদস্যরাষ্ট্রে উৎপাদন, কৃষি ও খনিশিল্প খাতে চাকরির হার কমেছে। নির্মাণ খাতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের আগের তুলনায় এখন প্রায় ২০ লাখ কম শ্রমিক কাজ করছেন। তবে সেবা খাতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ হয়েছে। বর্তমানে ইইউর মোট চাকরির তিন-চতুর্থাংশই সেবা খাতে।

পেশাগত উন্নয়ন বড় ভূমিকা রাখছে : এই রূপান্তরের মূল চালিকা শক্তি হলো পেশাগত উন্নয়ন। ১৯৯৫ সালে যেখানে পেশাজীবী চাকরির হার ছিল ১১ শতাংশ, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশে। বিশেষ করে ২০১১ সালের পর এই প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত হয়। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইউরোপে যে চাকরি বেড়েছে, তার সবই এসেছে উচ্চ বেতনভুক্ত পেশাজীবী খাতে।

এ ছাড়া নারীদের অংশগ্রহণও চাকরি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সৃষ্ট নেট নতুন চাকরির দুই-তৃতীয়াংশই নারীরা পূরণ করেছেন। ফলে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

উৎপাদনশীলতা বাড়েনি প্রত্যাশা অনুযায়ী

তবে এই কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধি তাল মেলাতে পারেনি। ১৯৯৫ সালের পর থেকে ইইউতে মাথাপিছু উৎপাদনশীলতা ধীরে ধীরে কমেছে, বিশেষ করে বেসরকারি সেবা খাতে। প্রতিবেদন বলছে, ২০০৪ সালের পর যেসব দেশ ইইউতে যোগ দিয়েছে, সেখানে উৎপাদনশীলতা বাড়ছে। কিন্তু পুরোনো সদস্যদেশগুলোতে তা প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ : প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপের মূল চ্যালেঞ্জ এখন এই মানবসম্পদ উন্নয়নকে উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধিতে রূপান্তর করা। এ জন্য নীতিনির্ধারকদের উচিত প্রযুক্তিগত বেকারত্বের আশঙ্কার বদলে কাজকে আকর্ষণীয় ও উচ্চমানসম্পন্ন করে তোলা, যাতে শ্রমবাজারে আরও বেশি মানুষ অংশ নিতে উৎসাহিত হয়।

এই প্রেক্ষাপটে দক্ষতা উন্নয়ন ও স্থানান্তরযোগ্যতা বাড়ানোর মাধ্যমে উদ্ভাবন ও টেকসই প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্য নিয়েছে। সঠিকভাবে এই রূপান্তর ব্যবস্থাপনা করা গেলে ইউরোপের শ্রমবাজার হবে আরও উৎপাদনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক।