এএফপি : জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে ইউরোপ। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবেশবিষয়ক সংস্থা (ইইএ) মনে করে, পরিবেশ রক্ষা ও বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব মোকাবিলায় ইউরোপের দেশগুলোকে আরও কাজ করতে হবে। গড়কাল সোমবার এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি এ কথা বলেছে।

ইইএ বলেছে, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ও বায়ুদূষণ কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে ইউরোপের পরিবেশের অবস্থা ভালো নয়।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট ইইউর ২৭টি সদস্যদেশের মধ্যে মতৈক্য হয়নি। এ কারণে ২০৩৫ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ আরও কমানোর বিষয়ে তারা কোনো আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে পারেনি। আর এর মধ্যেই ইইএ বিবৃতিটি দিয়েছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে ইইউর সদস্যদেশগুলো এখনো একমত হতে পারেনি। ওই প্রস্তাবে ২০৪০ সাল নাগাদ নিঃসরণের হার ১৯৯০ সালের তুলনায় ৯০ শতাংশ কমানোর কথা বলা হয়েছে।

১৯৯০ সালের পর থেকে ইইউর দেশগুলোতে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের হার ৩৭ শতাংশ কমেছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো এবং ২০০৫ সালের পর নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার দ্বিগুণ করার কারণে এমনটা সম্ভব হয়েছে।

ইইএ বলেছে, তাপমাত্রা বাড়তে থাকার পরও তাদের ৩৮টি সদস্যদেশের মধ্যে মাত্র ২১টির গরম মোকাবিলার উপযোগী স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মপরিকল্পনা আছে।

তবে ইইএ মনে করে, ইউরোপিয়ান গ্রিন ডিল নামের চুক্তিতে যেসব নীতিমালা ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উদ্যোগগুলো নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো আরও দ্রুত ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

ইইএ আরও বলেছে, ইউরোপ মহাদেশের পরিবেশগত অবস্থা এখনো অবনতির দিকে আছে এবং জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। ইইএ তাদের প্রতিবেদনের জন্য মহাদেশের ৩৮টি দেশের তথ্য সংগ্রহ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংরক্ষিত অভয়ারণ্যের প্রায় ৮১ শতাংশ খারাপ বা খুব খারাপ অবস্থায় আছে। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মাটি ক্ষয় হয়েছে এবং ৬২ শতাংশ জলাশয় ভালো অবস্থায় নেই।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুপেয় পানি সংকট বাড়ছে। তবে ইইএ মনে করে, সুশাসন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, পানির পুনর্ব্যবহার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষি, পানি সরবরাহব্যবস্থা ও জ্বালানি খাতে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পানি সাশ্রয় করা সম্ভব।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির অভাব বাড়ছে। তবে ইইএ মনে করে, সুশাসন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, পানির পুনর্ব্যবহার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষি, পানি সরবরাহব্যবস্থা ও জ্বালানি খাতে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পানি সাশ্রয় করা সম্ভব।

ইইএ বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে একটি ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর অনেক প্রভাব সরাসরি নয়। এগুলো অবকাঠামো ও বাস্তুব্যবস্থার ক্ষতি করে বা মূল্যবৃদ্ধির মতো সমস্যা তৈরি করে।

ইইএ বলেছে, ইউরোপের বেশির ভাগ ভবনের নকশা তাপমাত্রা সহনীয় করে তৈরি করা হয়নি। যার কারণে ১৯ শতাংশ ইউরোপীয় বাসিন্দা তাঁদের ঘরে আরামদায়ক তাপমাত্রা রাখতে পারছেন না।

ইইএ বলেছে, তাপমাত্রা বাড়তে থাকার পরও তাদের ৩৮টি সদস্যদেশের মধ্যে মাত্র ২১টির গরম মোকাবিলার উপযোগী স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মপরিকল্পনা আছে।

চরম আবহাওয়া ও জলবায়ুসংক্রান্ত ঘটনা, যেমন তাপপ্রবাহ, বন্যা, ভূমিধস ও অগ্ন্যুৎপাতে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৭টি ইইউভুক্ত দেশে ২ লাখ ৪০ হাজারের বেশি প্রাণহানি হয়েছে।