এএফপি, রয়টার্স: পশ্চিমা বিশ্বকে হামলার হুমকি দিলেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থা রাশিয়ান সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি বলেছেন, “ন্যাটো জোট কিংবা তার ইউরোপীয় মিত্ররা যদি ইউক্রেন যুদ্ধকে আরও উসকে দিতে কোনও পদক্ষেপ নেয়, সেক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বে হামলা চালানো ছাড়া রাশিয়ার আর কোনও পথ থাকবে না।” বৃহত্তম রুশ বার্তাসংস্থা তাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেদভেদেভ এই হুমকি দেন। তিনি বলেন, “ন্যাটো কিংবা তার কোনও ইউরোপীয় মিত্রকে লক্ষ্য করে হামলা করার কোনও পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। কিন্তু যদি তারা ইউক্রেন যুদ্ধকে আরও উসকে দিতে কোনও প্রকার প্রচেষ্টা চালায়, সেক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বে হামলা চালানো ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনও পথ খোলা থাকবে না। আমরা এজন্য প্রস্তুত।”
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য রাশিয়াকে ৫০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এই সময়সীমার মধ্যে যদি যুদ্ধবিরতি না হয়, তাহলে রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকিও দিয়েছেন তিনি। তবে মস্কো বলেছে, সংঘাতে রাশিয়ার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যদি হাসিল না হয়— তাহলে এই আল্টিমেটামে কোনও কাজ হবে না। এদিকে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্র জার্মানি সম্প্রতি ইউক্রেনে দূরপাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্যাট্রিয়ট পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিনে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে পাঠিয়েছে দেশটি। এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে সহজেই ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে হামলা করা সম্ভব।
তাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেদভেদেভ বলেন, “পশ্চিমা বিশ্বের (ইউরোপ) সরকার ও রাজনীতিবিদরা নির্বোধ। দ্বিচারিতা এবং দ্বৈত নীতি তাদের রক্তের মধ্যে মিশে আছে। নিজেদেরকে এখনও ঔপনিবেশিক প্রভু মনে করে তারা। ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে তারা যে বড় ধরনের হঠকারি পদক্ষেপ নেবে, তা অস্বাভাবিক নয়।”
“তবে আমরা এমন কোনও কাজ করব না। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ হবে সুচিন্তিত, হিসেবি এবং দৃঢ়। যদি প্রয়োজন হয়, আমরা হামলা চালব, যোগ করেন মেদভেদেভ। এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনে যোগাযোগ করেছিলেন সাংবাদিকরা। ক্রেমলিনের মুখপাত্র এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “তিনি (মেদভেদেভ) তার নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন, তবে ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়ার বৈরিতার বর্তমান যে পরিস্থিতি— তাতে তার উদ্বেগ ন্যায্য।”
রাশিয়া ইউক্রেনকে এক হাজার সেনার লাশ হস্তান্তর করেছে: গত মাসে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনার অংশ হিসেবে গৃহীত একটি চুক্তির আওতায় রাশিয়া গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনকে এক হাজার সেনার লাশ হস্তান্তর করেছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইস্তাম্বুলে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে অনুষ্ঠিত দুই দফা শান্তি আলোচনায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হলেও ব্যাপকহারে বন্দি বিনিময় এবং নিহত সেনাদের লাশ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। জানায়, যুদ্ধবন্দিদের চিকিৎসা সমন্বয়কারী ইউক্রেনের সরকারি সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এক হাজার লাশ ইউক্রেনে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, রাশিয়া দাবি করেছে লাশ গুলো ইউক্রেনের নাগরিকদের। তাদের মধ্যে সেনা সদস্যরাও রয়েছে। তবে ইউক্রেন আগেও অভিযোগ করেছে, রাশিয়া কখনো কখনো ইউক্রেনীয় বলে রুশ সেনাদের লাশ ফেরত দেয়। রাশিয়ার সমঝোতাকারী ও ক্রেমলিনের সরকারি দপ্তরের সহকারী ভ্লাদিমির মেদিনস্কি জানান, এর বিনিময়ে ইউক্রেন ১৯ জন রুশ সেনার লাশ ফেরত দিয়েছে। তিনি লাশ ফেরত আসার কিছু ছবিও প্রকাশ করেছেন। ছবিতে দেখা যায়, সাদা মেডিকেল স্যুট পরিহিত ব্যক্তিরা ফ্রিজিং ট্রাক থেকে লাশের ব্যাগ নামাচ্ছেন।
সম্প্রতি ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলাকালে বন্দিবিনিময় ও লাশ ফেরত দেওয়ার কার্যক্রম নিয়মিতভাবেই হয়ে আসছে। এটি দুই পক্ষের মধ্যে কয়েকটি সফল কূটনৈতিক উদ্যোগের মধ্যে এটি অন্যতম। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ সত্ত্বেও রাশিয়া বারবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছে। দুই পক্ষের মধ্যে তিন বছর ধরে চলা সংঘাতের অবসানের কোনো লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না।
গত মাসে শান্তি আলোচনায় রাশিয়া একাধিক কঠোর শর্ত তুলে ধরে। এর মধ্যে রয়েছে— রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের আরও ভূখণ্ড হস্তান্তর এবং পশ্চিমা সামরিক সহায়তার সব ধরনের প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান। কিয়েভ এই দাবিগুলোকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং প্রশ্ন তুলেছে, যখন মস্কো কোনো ছাড় দিতেই রাজি নয়, তখন ভবিষ্যতে আলোচনার প্রয়োজনইবা কী?