রয়টার্স, আল- জাজিরা, এএফপি, সিনহুয়া : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানের সঙ্গে আঙ্কারায় বৈঠক করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৈঠকে এরদোগান বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের থেমে থাকা শান্তি আলোচনায় গতি ফেরাতে চায় তুরস্ক। আঙ্কারায় বৈঠকে বসেন ইউক্রেন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। এ সময় তারা কিয়েভ এবং মস্কোর মধ্যে পুনরায় শান্তি আলোচনা শুরুর বিষয়ে আলোচনা করেন। এরদোগান বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে সমস্যাগুলোর সমাধান করে এমন একটি আরও ব্যাপক পদ্ধতির মাধ্যমে প্রক্রিয়াকে পুনরায় সক্রিয় করা উপকারী হবে। আঙ্কারা দীর্ঘস্থায়ী শান্তির দিকে আলোচনাকে এগিয়ে নিতে চায়।
অপরদিকে, একজন সিনিয়র ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, কিয়েভকে যুদ্ধ শেষ করার জন্য মার্কিন প্রস্তাবগুলো সম্পর্কে 'সংকেত' দেয়া হয়েছে, যা ওয়াশিংটন রাশিয়ার সাথে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছে। তবে এই প্রস্তাব তৈরির ক্ষেত্রে ইউক্রেনের কোনো ভূমিকা ছিল না বলে জানায় সূত্রটি। এর আগে, গত জুলাই মাসে ইস্তাম্বুলের বৈঠকের পর থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বন্ধের প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে যায়। এরই মাঝে প্রক্রিয়াটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব দিলেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়ার সাথেও বৈঠকে বসতে প্রস্তুত আনকারা বলে জানান তিনি। তবে এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।
এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে নতুন গোপন একটি শান্তি প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে কিয়েভকে তাদের ভূখ- ছাড় দিতে হবে। ওই প্রস্তাবে একই সঙ্গে ইউক্রেনকে তাদের সামরিক সক্ষমতা হ্রাসের শর্তও দেওয়া হয়েছে এবং খুব সম্ভবত প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এই প্রস্তাব মেনে নিতেই হবে, তাঁকে তেমন ইঙ্গিতই দেওয়া হয়েছে। খসড়া এই প্রস্তাবের বিষয়ে জানা আছে, এমন সূত্রের বরাত দিয়ে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম গত বুধবার আরও বলেছে, রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই খসড়া প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ এ সপ্তাহে ফ্লোরিডার মিয়ামিতে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের সচিব রুস্তেম উমেরভের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি ওই বৈঠকে ২৮ পয়েন্টের পরিকল্পনাটি তুলে ধরেছেন।
যদিও রাশিয়া নতুন কোনো শান্তি পরিকল্পনা হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেছে, খসড়া প্রস্তাবটি মোটামুটি রাশিয়ার পক্ষেই যাচ্ছে, এটি [রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির] পুতিনের জন্য খুবই সুবিধাজনক হবে। ওই প্রস্তাবের বিষয়ে জানা আছে, এমন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, এই যুদ্ধ অবসানের জন্য রাশিয়া যেসব দাবি রেখেছে, নতুন পরিকল্পনায় সেগুলো খুবই কাছ থেকে অনুসরণ করা হয়েছে। বড় পরিবর্তন ছাড়া কিয়েভের পক্ষে এর শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করাই সম্ভব নয়।
ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান নিয়ে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় চার বছরব্যাপী যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট আরও লিখেছেন, ‘রক্তপাত বন্ধ করা ও স্থায়ী শান্তি অর্জন করতে হলে আমাদের মূল কাজ হবে—সব অংশীদারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা, যেন মার্কিন নেতৃত্ব কার্যকর, শক্তিশালী থাকে।’ ‘খসড়া প্রস্তাবটি মোটামুটি রাশিয়ার পক্ষেই যাচ্ছে, এটি [রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির] পুতিনের জন্য খুবই সুবিধাজনক হবে।’
ভূখ- ছেড়ে দেওয়া ও সামরিক শক্তি কমানো : ওই প্রস্তাবের বিষয়ে জানা আছে, এমন দুজনের বরাত দিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ এ সপ্তাহে ফ্লোরিডার মিয়ামিতে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের সচিব রুস্তেম উমেরভের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি ওই বৈঠকে ২৮ দফার পরিকল্পনাটি তুলে ধরেছেন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে দনবাসের পূর্বাঞ্চলের বাকি অংশ ছাড়তে হবে, যার মধ্যে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা কিছু অঞ্চলও রয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর আকার অর্ধেকটা কমাতে হবে। নতুন প্রস্তাবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার কমানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, খসড়া প্রস্তাবে কিয়েভকে নির্দিষ্ট কিছু ধরনের অস্ত্র ত্যাগ করার কথাও বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা ফিরবে। খসড়া পরিকল্পনায় রুশ ভাষাকে ইউক্রেনে সরকারি একটি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, রুশ অর্থোডক্স চার্চের ইউক্রেনীয় শাখাকেও সরকারি মর্যাদা দেওয়াসহ আরও বেশ কিছু শর্ত রাখা হয়েছে। রাশিয়া বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। তবে ইউক্রেনে সংঘাত শেষ করা নিয়ে সম্ভাব্য শান্তি প্রস্তাব ঘোষণা করার মতো নতুন কোনো উন্নতি নেই।