রয়টার্স : যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার চাপের মুখেও ইউক্রেন কাল সোমবার আরেক দফা শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। গত শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তারা আগে রাশিয়ার প্রস্তাব দেখতে চায়। এদিকে একজন শীর্ষ মার্কিন সিনেটর মস্কোকে সতর্ক করে বলেছেন, নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়া ‘ভয়াবহভাবে আঘাতপ্রাপ্ত’ হবে। গত শুক্রবার কিয়েভে টার্কিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জেলেনস্কি লেখেন, ‘একটি বৈঠক ফলপ্রসূ হতে হলে এর কর্মসূচি স্পষ্ট হওয়া দরকার এবং আলোচনার যথাযথ প্রস্তুতি থাকতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রাশিয়া সম্ভাব্য পরবর্তী বৈঠক ব্যর্থ করতে যা কিছু সম্ভব, তা-ই করছে।’ রাশিয়ার তরফ থেকে কোনও নথি না পাওয়াকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। দুই দেশের প্রতিনিধিরা ১৬ মে ইস্তাম্বুল একবার বৈঠক করেছিল। তবে এতে কেবল বন্দী বিনিময় নিয়ে একটি চুক্তিই হয়েছিল।

জেলেনস্কি বলেন, তিনি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান শুক্রবার এক ফোনালাপে রাশিয়ার প্রস্তাবিত সোমবারের বৈঠকে ইউক্রেনের অংশগ্রহণের সম্ভাব্য শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা করেছেন। জেলেনস্কি টেলিগ্রামে লেখেন, শান্তির দিকে অগ্রসর হতে হলে অবশ্যই একটি যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। মানুষের হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হতে হবে। আমরা একমত যে এই বৈঠকটি অকার্যকর হতে পারে না এবং হওয়া উচিত নয়।’ জেলেনস্কি গত সোমবারের বৈঠকে অংশ নেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেননি, তবে তিনি বলেন যে তিনি এবং এরদোয়ান সম্ভাব্য একটি চতুর্মুখী বৈঠকের কথা আলোচনা করেছেনযেখানে ইউক্রেন, রাশিয়া, তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা থাকবেন। এরদোগান বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের উচিত শক্তিশালী প্রতিনিধি দল পাঠানো এবং নেতাদের এই বৈঠক শান্তিপ্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের কিছু রিপাবলিকান সদস্য এবং হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টারা ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তিনি অবশেষে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, যাতে মস্কোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায়। প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম কিয়েভ সফরে এসে বলেছেন, রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন মার্কিন সিনেট আগামী সপ্তাহে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি বিল নিয়ে এগোতে পারে।

কিয়েভে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রাহাম বলেন, তিনি সফরের আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ট্রাম্প এখন মস্কোর কাছ থেকে ‘কংক্রিট পদক্ষেপ’ আশা করছেন। ট্রাম্প গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, পুতিন ও জেলেনস্কি দুজনেই ‘জেদি’। তিনি অবাক ও হতাশ হয়েছেন যে, রাশিয়া ইউক্রেনে বোমাবর্ষণ চালিয়েছে যখন তিনি যুদ্ধবিরতি আনার চেষ্টা করছিলেন। তবে ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কিছু বলেননি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মস্কো ও কিয়েভকে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসানে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। রাশিয়া পরবর্তী মুখোমুখি বৈঠকের জন্য আগামী সপ্তাহে ইস্তাম্বুল ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে কিয়েভ বলেছে, তারা শান্তির খোঁজে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি না পাওয়া পর্যন্ত তারা আলোচনা নিয়ে অগ্রসর হবে না।

ফলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলোচনার জন্য প্রত্যাশা সীমিত। কারণ এখনও উভয় পক্ষের অবস্থান একে অপরের থেকে অনেক দূরে এবং প্রকৃত অর্থে তাদের মধ্যে সমঝোতার কোনও অগ্রগতি শুরু হয়নি। তবুও, কিয়েভ এবং মস্কো উভয়ই ট্রাম্পকে দেখাতে চায় যে তারা তার শান্তি প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে। কিয়েভ আরও মার্কিন সামরিক সহায়তা চায়। আর মস্কো আশা করছে ট্রাম্প বিদ্যমান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবেন।