সিএনএন, এএফপি: রোমের ক্যাপিটোলিন হিলের নিচে লুকিয়ে আছে এক বিস্মৃত ভূগর্ভস্থ গোলকধাঁধা। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে সেখানে মানুষের পদচিহ্ন পড়েনি। তবে শিগগিরই সেই নীরবতা ভাঙতে চলেছে। প্রবল উত্তেজনা নিয়ে প্রতœতত্ত্ববিদ এরসিলিয়া ডি’আমব্রোসিও অন্ধকার সুড়ঙ্গপথের সেসব গল্প তুলে আনছেন। গ্রোত্তিনো দেল ক্যাম্পিদোলিও বা ক্যাপিটোলিন গুহা নামে পরিচিত এই বিস্তৃত সুড়ঙ্গজাল প্রায় ৩ হাজার ৯০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এটি রোমান ফোরাম ও ২ হাজার বছরের পুরোনো মারচেলো থিয়েটারের নিচে ছড়িয়ে রয়েছে। সুড়ঙ্গটির সবচেয়ে গভীর অংশটি মাটির প্রায় ৯৮৫ ফুট গভীর পর্যন্ত নেমে গেছে।
প্রতœতত্ত্ববিদ এরসিলিয়া ডি’আমব্রোসিও বলেন, এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে এই গুহা ও সুড়ঙ্গগুলোর ভেতরে কেউ পা রাখেনি। মধ্যযুগে ব্যাপক পরিসরে ভূগর্ভস্থ গুহাগুলো গড়ে তোলা হয়েছিল। সেসময় এগুলো বসতঘর, দোকান, পানশালা ও রেস্তোরাঁ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমা হামলা থেকে বাঁচতে এখানে শহরের বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। ১৯২০–এর দশকে ফ্যাসিস্ট শাসক বেনিতো মুসোলিনির আদেশে সুড়ঙ্গগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
সংস্কারকাজের জন্য বসানো অস্থায়ী মাচা ও আধুনিক আলোকসজ্জা দেখে বোঝা যাচ্ছে, এটি সংরক্ষণ ও পুনর্গঠনের কাজ চলমান। রোমের নতুনতম ঐতিহাসিক আকর্ষণ হিসেবে ২০২৬ সালের শেষ দিকে বা ২০২৭ সালের শুরুতে সুড়ঙ্গগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আপাতত শুধু বিশেষজ্ঞদের জন্য প্রবেশাধিকার সীমিত রাখা হয়েছে, যাতে তাঁরা এর অদেখা স্থানগুলো আবিষ্কার করতে পারেন। ডি’আমব্রোসিও বলেন, ‘এই সংরক্ষণকাজের অভিজ্ঞতা প্রতœতত্ত্ব ও গুহাবিদ্যার এক অনন্য মিশ্রণ। রোমের পরিচিত দর্শনীয় স্থানগুলোর বাইরে এটি একটি রহস্যময় ও আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে। এটা অনেক দিক থেকেই একটি ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা।’
দর্শনার্থীরা এখানে এসে খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত জুপিটার মন্দিরে মার্বেল দিয়ে নির্মিত ভিত্তিপ্রস্তরের মতো বহু প্রাচীন বিস্ময় দেখতে পাবেন। বহু শতাব্দীর বিবর্তনে পাথরখনি ও জলাধার থেকে এই গুহাগুলো পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক ও আবাসিক স্থানে। এমনকি ঊনবিংশ শতাব্দীতে জার্মান সাহিত্যিক গ্যেটে এ ভূগর্ভেই খুঁজে পেয়েছিলেন প্রেম।