ইউরোপ
ইউক্রেনের শান্তি নিশ্চিত করতে ইচ্ছুকদের জোট গঠনের ঘোষণা
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করতে চার দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।
Printed Edition

৩ মার্চ, বিবিসি : যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করতে চার দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য যুদ্ধের অবসান ঘটানো ও দেশটিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা। এই পরিকল্পনায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ ‘ইচ্ছুকদের জোট’ হিসেবে তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করবে। সেই সঙ্গে ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করবে। ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করতে গত রোববার লন্ডনে এক সম্মেলনে বসেছিলেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও ইউরোপের ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। ‘সিকিউর আওয়ার ফিউচার’ শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজ ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। এটা কথা বলার কোনও সময় নয়। স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ ও একসঙ্গে কাজ করার এবং পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এটা। ইতিহাস আমাদের একটা কথা বলে, ইউরোপের কোথাও যদি সংঘাত চলতে থাকে, তা একদিন সবার দুয়ারে ধাক্কা দেবে।
জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন ‘শক্তিশালী সমর্থন’ অনুভব করছে এবং এই সম্মেলন ইউরোপীয় ঐক্যের এক অনন্য উচ্চতা প্রদর্শন করেছে।
এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো, যখন মাত্র দুই দিন আগে হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে।
সম্মেলনের পর জেলেনস্কি বলেন, আমরা সবাই ইউরোপে একসঙ্গে কাজ করছি, যাতে আমেরিকার সঙ্গে প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি ভিত্তি স্থাপন করা যায়।
সম্মেলন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্টারমার চার দফা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরনে। এগুলো হলো: ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়ানো। যে কোনও স্থায়ী শান্তিচুক্তিতে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ইউক্রেনকে আলোচনায় সরাসরি অন্তর্ভুক্ত রাখা। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।একটি ‘ইচ্ছুকদের জোট’ গঠন করা, যারা ইউক্রেনের সুরক্ষা এবং যুদ্ধোত্তর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
এছাড়াও রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইউক্রেনকে ১৬০ কোটি পাউন্ড দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কিয়ার স্টারমার। এই অর্থ খরচ করে ইউক্রেনের জন্য পাঁচ হাজারের বেশি আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে।
তবে স্টারমার বলেননি কোন কোন দেশ এই ‘ইচ্ছুকদের জোটে’ যোগ দিতে সম্মত হয়েছে। তবে যারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা জরুরি ভিত্তিতে পরিকল্পনা এগিয়ে নেবে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্য তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ‘মাঠে সেনা ও আকাশে বিমান’ মোতায়েন করতে প্রস্তুত।
স্টারমার বলেন, ইউরোপকে অবশ্যই বড় দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের এই মহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ ও তা সফল হওয়ার জন্য অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী সমর্থন থাকতে হবে। আলোচনায় রাশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। তবে মস্কোকে শর্ত নির্ধারণ করতে দেওয়া যাবে না।
‘আমি স্পষ্ট করে বলছি, টেকসই শান্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমরা ট্রাম্পের সঙ্গে একমত। এখন আমাদের একসঙ্গে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে,’ স্টারমার বলেন।
সম্মেলনে উপস্থিত দেশগুলোর মধ্যে ছিল ফ্রান্স, পোল্যান্ড, সুইডেন, তুরস্ক, নরওয়ে, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া, ফিনল্যান্ড, ইতালি, স্পেন ও কানাডা।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন বলেন, ‘এখন ইউরোপকে পুনরায় সশস্ত্র করা জরুরি।’ ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটও সম্মেলনের পর একই কথা বলেন এবং উল্লেখ করেন যে ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে দীর্ঘ মেয়াদে লড়াই চালিয়ে যেতে যা কিছু দরকার তা দিতে প্রস্তুত।
২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ সামরিক আগ্রাসন শুরু করে।