DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

ইউরোপ

গাজার জন্য বাস্তবসম্মত আরব পরিকল্পনায় সমর্থন ৪ ইউরোপীয় দেশের

ইউরোপের প্রধান দেশগুলো বলেছে, তারা ফিলিস্তিনের গাজা পুনর্গঠনে আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাকে সমর্থন করে।

Printed Edition
Gazi

৯ মার্চ, আনাদোলু ,বিবিসি, রয়টার্স: ইউরোপের প্রধান দেশগুলো বলেছে, তারা ফিলিস্তিনের গাজা পুনর্গঠনে আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাকে সমর্থন করে। আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গাজা থেকে ফিলিস্তিনীদের বাস্তুচ্যুত না করেই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। গাজা পুনর্গঠনে মিসরের পরিকল্পনাটি আরব নেতারা অনুমোদন করেছেন। কায়রোতে গত মঙ্গলবার আরব লিগের সম্মেলনে মিসরের প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়। এর তিন দিন পর গতকাল শনিবার জেদ্দায় ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) বৈঠকে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়।

কিন্তু আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করেছে। যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজা জোর করে খালি করার পরিকল্পনা রয়েছে ট্রাম্পের।

ট্রাম্পের প্রস্তাবে গাজাবাসীকে জর্ডান ও মিসরে সরিয়ে দিতে বলা হয়েছে। গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’য় (ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল বরাবর একটি রিসোর্ট এলাকা) পরিণত করার বিষয়ে ট্রাম্প তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন। ট্রাম্পের পরিকল্পনা ফিলিস্তিনীদের পাশাপাশি আরব নেতারা নাকচ করেছেন। গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাটি ট্রাম্পের ধারণার একটি বিকল্প। গত শনিবার ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাটিকে ‘বাস্তবসম্মত’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। এই পরিকল্পনায় পাঁচ বছরের মধ্যে গাজা পুনর্গঠনের কথা বলা আছে। এক বিবৃতিতে ইউরোপের এই দেশগুলো পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন, আরব-সমর্থিত প্রস্তাবটিতে গাজার বিপর্যয়কর জীবনযাত্রার দ্রুত ও টেকসই উন্নতির প্রতিশ্রুতি আছে।

ড্রোন হামলায় ৩ ফিলিস্তিনী নিহত ধ্বংসস্তূপে মিলল আরও ৭ লাশ : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইল হামলায় আরও তিন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও সাতজন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই গাজায় হামলা চালাচ্ছে এবং এতে ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। এছাড়া গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪৮ হাজার ৪৫০ ছাড়িয়ে গেছে।

গত শনিবার বেশ কয়েকটি চিকিৎসা সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, দক্ষিণ ও উত্তর গাজা উপত্যকায় ইসরাইল বিমান হামলায় তিন ফিলিস্তিনী নিহত এবং আরও সাতজন আহত হয়েছেন। চিকিৎসা সূত্র আনাদোলুকে জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের পূর্বে আবু হালাওয়েহ এলাকায় ইসরাইল সেনাবাহিনীর হামলায় তিন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। ইসরাইল ড্রোন এই হামলা চালিয়েছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছেন।

তারা আরও জানিয়েছে, গাজা-মিসর সীমান্তে ফিলাডেলফি করিডোরে অবস্থানরত ইসরাইল সামরিক যানবাহন দক্ষিণ ও মধ্য রাফায় ফিলিস্তিনীদের বাড়িঘর লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। এছাড়াও পূর্ব রাফাহতে আল-সালাম পাড়ায় একটি ইসরাইল ট্যাংক বাড়িঘরে শব্দ বোমা নিক্ষেপ করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানিয়েছেন, গাজা শহরের পূর্ব সীমান্তের কাছে অবস্থানরত ইসরাইল সেনাবাহিনীর যানবাহনগুলোও তীব্র গুলিবর্ষণ করেছে। পৃথকভাবে উত্তর গাজার বেইত হানুন শহরে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করার সময় বুলডোজার লক্ষ্য করে একটি ইসরাইল ড্রোন হামলা চালালে সাতজন ফিলিস্তিনী আহত হন। আহতদের উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এদিকে ফিলিস্তিনী স্বাস্থ্যকর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে আরও ৭ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনীদের সংখ্যা বেড়ে ৪৮ হাজার ৪৫৩ জনে পৌঁছেছে বলে শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইল গোলাবর্ষণে গত ৪৮ ঘণ্টায় ছয়জন ফিলিস্তিনী মারা গেছেন এবং তারাও প্রাণহানির এই সংখ্যার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া আহত আরও আটজনকে হাসপাতারে ভর্তি করা হয়েছে। যার ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইল আক্রমণে আহতের মোট সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১১ হাজার ৮৬০ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রসঙ্গত, গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইল বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে।

মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনী বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।