১৭ মার্চ, রয়টার্স : সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গতকাল সোমবার একটি বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবার কথা। সম্মেলনটি সিরিয়ার জন্য সহায়তার প্রতিশ্রুতি সংগ্রহের উদ্দেশে আয়োজিত হচ্ছে। দেশটি বর্তমানে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি এবং বাশার আল-আসাদের পতনের পর অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা এ খবর জানিয়েছে।
২০১৭ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্রাসেলসে এই সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে। তবে আসাদ সরকার এতে অংশ নেয়নি। কারণ ২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে নিষ্ঠুর কার্যকলাপের কারণে তাকে বয়কট করা হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে আসাদের পতনের পর, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা সম্মেলনটিকে নতুন শুরুর সুযোগ হিসেবে দেখতে চান। যদিও নতুন ইসলামপন্থি শাসকদের সঙ্গে আসাদপন্থি বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তারপরও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাইয়া কাল্লাস বলেন, এই মুহূর্তে সিরিয়ার জন্য এটি অত্যন্ত কঠিন সময়।
তবে এটিকে ‘আশার সময়’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি। কারণ ১০ মার্চ একটি চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এবং কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসকে (এসডিএফ) নতুন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আসাদ সরকারকে উৎখাতকারী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামকে (এইচটিএস) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে জাতিসংঘ। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা নতুন শাসকদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। অবশ্য যদি এই শাসকরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শিবানি সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এতে ইউরোপীয় ও আরব মন্ত্রীদের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও থাকবেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা বলছেন, এই সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র তাদের মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রমে ব্যাপক কাটছাঁট করছে।
গত বছরের সম্মেলনে ৭.৫ বিলিয়ন ইউরো অনুদান ও ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের জন্য ২.১২ বিলিয়ন ইউরোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য অনুসারে, সিরিয়ায় প্রায় ১৬.৫ মিলিয়ন মানুষ মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে ১২.৯ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট সিরিয়ার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। যার ফলে সিরিয়ার মুদ্রার মান তীব্রভাবে কমেছে এবং প্রায় পুরো দেশ দারিদ্র্যের মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে।