এএফপি, বিবিসি : সুইস আল্পস অঞ্চলে একের পর এক ঘটনা পরিক্রমায় সুইজারল্যান্ডের বার্চ হিমবাহ নাটকীয়ভাবে ধসে পড়ে। এতে নিচের উপত্যকায় অবস্থিত ব্লাটেন গ্রাম সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ফরাসি গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন হিমবিজ্ঞানী ও ভূবিজ্ঞানীরা। জেনেভা থেকে এএফপি জানায়, বিশেষজ্ঞরা কয়েকদিন আগেই ধারণা করেছিলেন, বুধবার যে ভূমিধস হয়েছে, তা হিমবাহটির ভয়াবহ ধসের কারণ হতে পারে। কিন্তু এর মূল কারণগুলো আরও অনেক আগে থেকেই তৈরি হতে শুরু করেছিল। এ ঘটনার সম্ভাব্য কারণ নিয়ে জোরালো কিছু তত্ত্ব রয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে এর সম্পর্ক কতটুকু, সে নিয়েও আলোচনা চলছে-তবে এখনো সেসব নিশ্চিতভাবে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয়নি। লুজান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট অব আর্থ সারফেস ডায়নামিক্স’-এর সিনিয়র প্রভাষক ক্রিস্টোফ লামবিয়েল বলেছেন, ‘এটিকে একটি ধারাবাহিক বা চেইন রিঅ্যাকশন ধরনের ঘটনা হিসেবে ধরা যায়, কারণ এখানে একাধিক প্রক্রিয়া যুক্ত হয়েছে।’

হিমবাহের ওপরে থাকা পর্বত: হিমবাহটির ওপরে অবস্থিত ৩,৩৪২ মিটার (১০,৯৬৫ ফুট) উচ্চতার ক্লেইনেস নেস্টহর্ন পর্বত আগে থেকেই কিছুটা অস্থিতিশীল ছিল, আর ভূমিক্ষয়ের গতি বিশেষভাবে ধসে পড়ার ১০ দিন আগে থেকেই দ্রুত বেড়ে যাচ্ছিল। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ছিল, যেকোনো সময় পুরো পর্বত ধসে পড়তে পারে। তবে একসঙ্গে ধস না হয়ে কয়েকদিন ধরে ছোট ছোট ধস হতে থাকাটা আপাতত ‘সবচেয়ে সহনীয়’ পরিণতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

হিমবাহের ওপর পাথরধস : প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পাথর হিমবাহের ওপর এসে পড়ে। গ্লেসিয়ার মনিটরিং সুইজারল্যান্ডের পরিচালক ম্যাথিয়াস হুস বলেন, ‘আপনি যদি একটি অস্থিতিশীল ভিত্তির ওপর অনেক ওজন চাপিয়ে দেন, সেটি পিছলে যেতে পারে। ঠিক সেটাই ঘটেছে। এই অতিরিক্ত ওজনের প্রতিক্রিয়ায় হিমবাহটি দ্রুত সরে যেতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত দুর্যোগ ঘটে যায়।’

বার্চ হিমবাহ : বার্চ হিমবাহটি ছিল একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা, সুইজারল্যান্ডের একমাত্র হিমবাহ, যা পিছু হটার পরিবর্তে অগ্রসর হচ্ছিল। তবে এর পেছনে অতিরিক্ত তুষারপাত দায়ী নয়। হুসের মতে, ‘এটি সম্ভবত ওই পর্বত থেকে ক্রমাগত পাথরধসের কারণে প্রাক-লোডিং অবস্থায় ছিল, যার ফলে হিমবাহটি সামনের দিকে ঠেলতে শুরু করে। কাজেই ভূমিধস হঠাৎ করে হয়নি।’ হিমবাহটি এমনিতেই একটি ঢালু এলাকায় ছিল, আর সামনের দিকটি ছিল আরও ঢালু, যা পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তোলে। গত মঙ্গলবার হিমবাহের সামনের দিক থেকে ছোট আকারের খণ্ড খণ্ড ধস হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, বুধবারের আকস্মিক পুরো ধসটি ছিল অপেক্ষাকৃত অপ্রত্যাশিত।