বিবিসি : ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়ামে চুরির কয়েকঘণ্টা পরই আরেকটি জাদুঘর থেকে প্রায় দু হাজার স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা চুরির খবর পাওয়া গেছে। চুরি হওয়া মুদ্রার আর্থিক মূল্য অন্তত এক লাখ ৪০০০ মার্কিন ডলার। ব্রিটিশ। ফরাসি দার্শনিক দনি দিদরোর সম্মানে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘর মাইসোঁ দে লুমিইয়েরেতে এই চুরির ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, গত রোববার রাতে মুদ্রাগুলো চুরি করা হয়। এরপর সাপ্তাহিক ছুটি শেষে মঙ্গলবার জাদুঘর খুললে কর্মীরা একটি ভাঙা প্রদর্শনী কেস দেখতে পান এবং কর্তৃপক্ষকে খবর দেন। স্থানীয় প্রশাসনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মুদ্রাগুলো নেওয়া হয়েছে। চুরি হওয়া মুদ্রাগুলো ১৭৯০ থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যে তৈরি করা হয়েছিল এবং ২০১১ সালে ভবন সংস্কারের সময় এগুলো আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তীতে এই মুদ্রাগুলো শহরটির নিজস্ব সংগ্রহ হিসেবে জাদুঘরে রাখা হয়। সম্প্রতি ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত মাসে প্যারিসের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম থেকে ১৫ লাখ ইউরো মূল্যের ছয়টি স্বর্ণের টুকরো চুরি হয়। এই অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে স্পেনের বার্সেলোনায় এক চীনা নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া, সেপ্টেম্বরে লিমোজ শহরের চীনামাটি জাদুঘর থেকে দুটি চীনামাটির পাত্র ও একটি ফুলদানি চুরি হয়, যার মোট মূল্য আনুমানিক ৬৫ লাখ ইউরো। এসব সামগ্রী এখনও উদ্ধার হয়নি। একজন সিরামিক বিশেষজ্ঞ বলেন, এই শিল্পকর্মগুলো সাধারণ বাজারে বিক্রয়যোগ্য নয়, কারণ এগুলো খুব সহজেই মানুষ চিনে ফেলবে।

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামের। রবিবার দিনের আলোয় একদল অজ্ঞাত ব্যক্তি ৮৮ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের ঐতিহাসিক গয়না চুরি করে। শ্রমিক সেজে তারা যান্ত্রিক মই ও শক্তিশালী সরঞ্জাম ব্যবহার করে গ্যালারি অফ অ্যাপোলোতে ঢোকে। লুট হওয়া গয়নার মধ্যে ছিল সম্রাট নেপোলিয়নের স্ত্রীকে দেওয়া হীরা-এমারেল্ডের নেকলেস, সম্রাজ্ঞী ইউজেনির টিয়ারা এবং রানী মেরি-আমেলির মালিকানাধীন কয়েকটি অলঙ্কার। শিল্পকর্ম সংক্রান্ত ইউরোপের বিখ্যাত গোয়েন্দা আর্থার ব্র্যান্ড বলেন, ল্যুভরকে টার্গেট করে যদি পার পাওয়া যায়, তাহলে স্থানীয় অপরাধীরা তাদের নিকটবর্তী জাদুঘরে হানা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। ইউরোপজুড়ে এখন কপিক্যাট (অনুকরণমূলক) চুরির ঢেউ দেখা দিতে পারে। ল্যুভরের পরিচালক লরঁস দে কার ফরাসি সিনেটে বলেন, ভবনের চারপাশে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো পুরনো এবং অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। যেই দেয়াল দিয়ে চোরেরা ঢুকেছিল, সেটি পর্যবেক্ষণের একমাত্র ক্যামেরাটি ছিল বিপরীত দিকে ঘোরানো। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ল্যুভরের এক-তৃতীয়াংশ কক্ষে কোনও সিসিটিভি ছিল না, আর অ্যালার্ম সিস্টেমও বাজেনি।