গাজা উপত্যকার অবরোধ ভাঙা ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে গঠিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় নাগরিক-নেতৃত্বাধীন নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ সম্প্রতি যাত্রা শুরু করেছিল।
তবে দখলদার ইসরায়েল এই নৌবহরকে ‘নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ আখ্যা দিয়ে আটকে দিয়েছে, যার ফলে গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আবারও ফিলিস্তিনের দিকে ফিরেছে।
এই মানবিক অভিযানে ৪৪ দেশের প্রায় ৫০০ জন অংশ নেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জলবায়ু আন্দোলনের নেত্রী গ্রেটা থুনবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকার বীর নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ম্যান্ডলা ম্যান্ডেলা, ইউরোপ ও এশিয়ার কয়েকজন সংসদ সদস্য, আইনজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা।
নৌবহরে ছিলেন দু’জন সুপরিচিত গায়িকা ও অভিনেত্রী বোন হেলিজা হেলমি ও হাজওয়ানি হেলমি। ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাদের।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাজওয়ানি বলেন, একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকা। অবরোধ থামাতে হবে এবং তাদের কাছে খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দিতে হবে।
তিনি আরও জানান, আটক অবস্থায় তারা তিন দিন ধরে কোনো খাবার পাননি, এমনকি তীব্র তৃষ্ণায় শৌচাগারের পানি পান করতে বাধ্য হয়েছেন।
তার ভাষায়, অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ইসরায়েলি সৈন্যরা তাদের দেখে বলছিল, ‘তারা মারা গেছে কি না সেটা আমাদের সমস্যা নয়।’ আমি সবার কাছে বলতে চাই-ইসরায়েলি বাহিনী অত্যন্ত নির্মম।
অন্যদিকে বড় বোন হেলিজা হেলমি বলেন, ১ অক্টোবরের পর আজ ৪ অক্টোবর প্রথমবার খাবার খেয়েছি। তিন দিন কিছুই খাইনি, শুধু বাথরুমের পানি খেয়েছি।
তিন দিনের নির্যাতন শেষে মুক্তি পান দুই বোন। তারা তুরস্ক সরকারের সহযোগিতা ও জনগণের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তুরস্কের মানুষ আমাদের পাশে ছিল বলেই আমরা আবার বেঁচে ফিরেছি। তাদের ভালোবাসা কখনো ভুলব না।
বিশ্লেষকদের মতে, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নাগরিক-নেতৃত্বাধীন মানবিক নৌবহর, যা গাজার চলমান মানবিক সংকটের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সহানুভূতি ও প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে।