সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা শিল্প প্রদর্শনীতে একের পর এক ভয়ঙ্কর অস্ত্র উন্মোচন করে আবারও আন্তর্জাতিক মহলের নজর কেড়েছে তুরস্ক। শব্দের গতির প্রায় আট গুণ দ্রুতগামী ‘হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র’ প্রকাশের রেশ না কাটতেই এবার দেখা মিলেছে দুই বিধ্বংসী অ-পরমাণু বোমার—গাজাপ ও হায়ালেট। তুর্কি প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ নির্মিত এই অস্ত্রগুলো এতটাই ভয়ঙ্কর যে, একাধিক শহর নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে বলে দাবি করা হচ্ছে।
‘গাজাপ’ শব্দের অর্থ ‘ক্রোধ’। প্রায় এক টন ওজনের এই বোমাটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে বিস্ফোরণের সময় এটি নিয়ন্ত্রিতভাবে ১০ হাজারের বেশি টুকরো ছড়িয়ে দিতে পারে। এতে বিস্ফোরণের সময় এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ভয়ানক ক্ষয়ক্ষতি ঘটানো সম্ভব। গাজাপের ভেতরে ব্যবহৃত হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির স্প্লিন্টার সিস্টেম যা এলোমেলোভাবে ছড়ানোর পরিবর্তে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্ট আঘাত হানে।
অন্যদিকে, ‘হায়ালেট’ নামের অপর বোমাটি মূলত তৈরি হয়েছে শক্ত কাঠামোর ভেতর প্রবেশ করে বিস্ফোরণের উদ্দেশ্যে। এটি সাত মিটার পুরু কংক্রিট বা ইস্পাতের দেয়াল ভেদ করে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। এমন ক্ষমতা সাধারণত দেখা যায় পারমাণবিক স্থাপনার মতো প্রতিরক্ষিত কাঠামো ধ্বংসে ব্যবহৃত বোমায়। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, এটি ৯০ মিটার গভীরে প্রবেশ করে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম।
এর পাশাপাশি তুরস্ক ‘টাইফুন ব্লক-৪’ নামে একটি হাইপারসনিক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও প্রদর্শন করেছে, যার ওজন প্রায় ২.৩ টন এবং পাল্লা ৮০০ কিলোমিটার। এটি বহুমুখী ওয়ারহেড বহনে সক্ষম এবং শত্রুর এয়ার ডিফেন্স, কন্ট্রোল সেন্টার এবং সামরিক হ্যাঙ্গারের মতো স্থাপনাগুলিতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারে।
তুরস্কের এ ধরনের সামরিক উন্নয়ন ঘুম কেড়েছে প্রতিবেশী গ্রিস, ইসরায়েল ও ভারতের মতো দেশের। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই প্রযুক্তিগুলো পাকিস্তানের কাছেও পৌঁছাতে পারে—যা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরো উদ্বেগজনক করে তুলবে। বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যুতে তুরস্ক ও পাকিস্তানের সম্পর্ক বরাবরই ঘনিষ্ঠ।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্ক যে কেবল অস্ত্র নির্মাণে আত্মনির্ভর হচ্ছে তাই নয়, বরং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। অচিরেই এই অস্ত্রগুলোর প্রভাব বিশ্বের বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেখা যেতে পারে।