গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতে ৮০ শতাংশের বেশি প্রতিবন্ধী মানুষ তাদের সহায়ক যন্ত্রপাতি হারিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা। এতে তাদের চলাচল চরমভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে, যার ফলে মানবিক সহায়তা, চিকিৎসা ও মৌলিক সেবা পাওয়াও কঠিন হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, চলাচল সীমিত হওয়ায় এই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সহ্য করতে হচ্ছে বহু প্রতিকূলতা—যেমন মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়া, বৈষম্য ও সামাজিক অপমান, এমনকি বিস্ফোরক দ্রব্যের ঝুঁকি।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজার হাসপাতালগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, যা ইতোমধ্যেই বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। জ্বালানি ছাড়া ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ইনকিউবেটর ও সার্জারি ওয়ার্ড চালু রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
জাতিসংঘের আরেক সংস্থা UNRWA জানিয়েছে, গাজার শিশুদের মধ্যে মারাত্মক অপুষ্টির হার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংস্থাটি জানায়, “আমাদের ক্লিনিকে পরীক্ষিত প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে।”
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ বছরের নিচে বয়সী ২ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। UNRWA জানায়, যুদ্ধ শুরুর আগে গাজায় অপুষ্টির হার ছিল অত্যন্ত কম। কিন্তু বর্তমানে ওষুধ, পুষ্টিকর খাদ্য, জীবাণুনাশক এবং জ্বালানি চরমভাবে কমে গেছে।
এদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র বিমান ও গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, ভোর থেকে পূর্ব গাজা সিটির বসতি এলাকায় একাধিক বিমান হামলা চালানো হয়েছে। উত্তরের শেখ রাদওয়ান এলাকাতেও ড্রোন থেকে গুলি ছোঁড়া হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে ৯৪টি মরদেহ পৌঁছেছে, যার মধ্যে একটি ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৩৬৭ জন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বহু হতাহত এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে কিংবা এমন এলাকায় পড়ে আছে, যেখানে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮,৬৬৭ জন, আর আহত হয়েছেন ১,৩৯,৯৭৪ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ২৬ জন ছিলেন এমন বেসামরিক নাগরিক, যারা মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩২ জন। সহায়তা নিতে গিয়ে নিহত মানুষের মোট সংখ্যা এখন ৮৭৭ জন, আর আহত ৫,৪৩২ জন ছাড়িয়েছে।