ভয়েস অব আমেরিকার (ভিওএ) ১৩০০-এর বেশি কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দুটি মার্কিন সংবাদ সংস্থার অর্থায়নও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার ( ১৫ মার্চ ) এ পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়।

এর আগে গত শুক্রবার ট্রাম্প স্বাক্ষরিত এক নির্বাহী আদেশে ইউএসএজিএম-সহ আরও ছয়টি কম পরিচিত সংস্থাকে আইনে নির্ধারিত ন্যূনতম পর্যায়ে কার্যক্রম সীমিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি যুক্তি দেন, এটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর জন্য জরুরি।

ভয়েস অব আমেরিকা-এর পরিচালক মাইকেল আব্রামোভিটস জানিয়েছেন, তার প্রায় ১,৩০০ সাংবাদিক, প্রযোজক ও সহকারীদের প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৫০টি ভাষায় সম্প্রচারকারী এই গণমাধ্যমটির কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

লিঙ্কডইনে দেওয়া এক পোস্টে ভিওএ-এর পরিচালক মাইকেল আব্রামোভিটস বলেন, "৮৩ বছরে এই প্রথম ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা ভীষণ দুঃখজনক। বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ে এই গণমাধ্যমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।"

ভিওএ-এর মূল সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়া (ইউএসএজিএম) পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর জন্য সম্প্রচারকারী রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি-এর অনুদানও বাতিল করেছে। এর আওতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে, চীন ও উত্তর কোরিয়ার জন্য সম্প্রচারকারী রেডিও ফ্রি এশিয়া-এর অনুদানও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মুখে পড়তে যাচ্ছে, যা স্বৈরাচারী শাসিত দেশগুলোর জন্য নির্ভরযোগ্য সংবাদ সরবরাহ করে যেত।

১৯৪২ সালে নাৎসি প্রচারণার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) এখন প্রতি সপ্তাহে ৩৬ কোটি মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়।

সংস্থাটির সর্বশেষ কংগ্রেস রিপোর্ট অনুসারে, ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়ার (ইউএসএজিএম) অধীনে প্রায় ৩,৫০০ কর্মী কাজ করেন এবং ২০২৪ সালে তাদের বাজেট ছিল ৮৮৬ মিলিয়ন ডলার।

ভিওএ-এর সিওল ব্যুরো প্রধান উইলিয়াম গ্যালো রোববার জানান, তিনি প্রতিষ্ঠানটির সব সিস্টেম ও অ্যাকাউন্ট থেকে লগআউট হয়ে গেছেন।

ব্লুস্কাইয়ে করা এক পোস্টে উইলিয়াম গ্যালো বলেন, "আমি সবসময় সত্যটাই বলতে চেয়েছি, যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন। যদি এটাকে কেউ হুমকি মনে করে, তাহলে তাই সই।"

ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ)-এর পরিচালক পদে মনোনীত সাবেক সংবাদ উপস্থাপক ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সমর্থক কারি লেক এক বিবৃতিতে ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়াকে (ইউএসএজিএম) বলেন, "এটি একটি বিশাল পচনধরা প্রতিষ্ঠান ও আমেরিকান জনগণের জন্য বোঝা এবং এটি আর উদ্ধারযোগ্য নয়।"

নিজেকে ইউএসএজিএম-এর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা দাবি করে লেক জানান, তিনি সংস্থাটির আকার আইনের সীমার মধ্যে এনে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনবেন।

রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি-এর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ান সরকার এটিকে 'অগ্রহণযোগ্য সংস্থা' হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং রাশিয়া ও রাশিয়া-অধিকৃত ইউক্রেনে বসবাসরতদের সতর্ক করা হয়েছে যে, তারা যদি এর কোনো কন্টেন্ট পছন্দ করে বা শেয়ার করে, তাহলে জরিমানা বা কারাদণ্ডের মুখে পড়তে পারেন।

চেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জান লিপাভস্কি বলেছেন, রেডিও ফ্রি ইউরোপ স্বৈরশাসনের অধীনে থাকা জনগণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে আসছে।

এক্স-এ এক পোস্টে জান লিপাভস্কি বলেন, "বেলারুস থেকে ইরান, রাশিয়া থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত- আরএফই এবং ভয়েস অব আমেরিকা মুক্ত সংবাদ পাওয়ার কয়েকটি বিরল উৎসের মধ্যে একটি ছিল।"

এই পদক্ষেপটি আসে শুক্রবার ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত এক নির্বাহী আদেশের পর। সেখানে তিনি ইউএসএজিএম এবং আরও ছয়টি কম পরিচিত সংস্থাকে আইনে নির্ধারিত ন্যূনতম পর্যায়ে কার্যক্রম সীমিত করার নির্দেশ দেন। তিনি যুক্তি দেন, এটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর জন্য জরুরি।