মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদকালে দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম বড় তিনটি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা বিপুল জয় পেয়েছে। যদিও এই নির্বাচনে ট্রাম্পের নাম ছিল না, তবু তাকে একজন ‘অদৃশ্য প্রার্থী’ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছিল। সিএনএনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম বড় রাজনৈতিক পরীক্ষামূলক এই নির্বাচনে তিনি হেরে গেছেন।

মঙ্গলবার দেশটির বৃহত্তম শহর নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচন এবং নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচনে ট্রাম্পের দল রিপাবালিকান পার্টির প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন।

রয়টার্স লিখেছে, এসব নির্বাচনের মাধ্যমে ডেমোক্র্যাট পার্টিতে নতুন প্রজন্মের নেতাদের উত্থান ঘটেছে আর এটি আগামী বছর কংগ্রেসের নির্বাচনের আগে বিপর্যস্ত দলটিতে গতি সঞ্চার করছে।

নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জয় পেয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রায় একজন অপরিচিত আইনপ্রণেতা থেকে উল্কার মতো উত্থানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দৃশ্যমান ডেমোক্র্যাটিক ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন।

মামদানির পাশাপাশি ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচনে জয় পেয়েছেন মধ্যপন্থি অ্যাবিগেল স্প্যানবার্গার (৪৬) এবং নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচনে জয় পেয়েছেন আরেক মধ্যপন্থি মাইকি শেরিল (৫৩)।

হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের আলোড়নপূর্ণ প্রথম নয় মাসকে মার্কিন ভোটাররা কীভাবে নিয়েছেন তার একটি প্রাথমিক পরীক্ষা বলা যেতে পারে এসব নির্বাচনকে। এই নির্বাচনগুলোর মাধ্যমে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে ডেমোক্র্যাটদের প্রচারণা কৌশলের কিছু পরীক্ষাও হয়ে গেল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের কাছে হারার পর থেকে নিজেদের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজছে দলটি।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের এক বছর আগে মতামত জরিপগুলোতে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাট ব্রান্ডটি ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয় রয়ে গেছে। এমনকী ট্রাম্পের পক্ষে জনসমর্থন হ্রাস পেলেও তা ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে যায়নি। মঙ্গলবারের নির্বাচনগুলো মূলত ডেমোক্র্যাট প্রভাবিত অঞ্চলগুলোতে হয়েছে যেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ট্রাম্প সমর্থন পাননি।

তারপরও মঙ্গলবারের নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীরা ডেমোক্র্যাট ভোটারদের পুনরুজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব ভোটাররা পার্টির সামনের সারির নেতা হিসেবে নতুন মুখ দেখার দাবি তুলেছিলেন।

জয়ী তিন ডেমোক্র্যাট নেতাই অর্থনৈতিক সমস্যা, বিশেষ করে ক্রয়ক্ষমতার ওপর জোর দিয়েছেন। অধিকাংশ মার্কিন ভোটার এটিকেই সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করছেন। এই সমস্যা সমাধানে স্প্যানবার্গার ও শেরিল ডেমোক্র্যাট দলের মধ্যপন্থি অবস্থান থেকে কথা বললেও মামদানি প্রায় বিদ্রোহী প্রচারণা চালিয়ে নিজেকে একজন দ্বিধাহীন প্রগতিশীল হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি নিজেকে সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কাটের্জের ছাঁচের একজন রাজনীতিক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

নির্বাচনে স্প্যানবার্গার ভার্জিনিয়ার রিপাবলিকান লেফটেন্যান্ট গভর্নর উইনসাম আর্ল-সিয়ার্সকে পরাজিত করেছেন। তিনি অঙ্গরাজ্যটির রিপাবলিকান গভর্নর গ্লেন ইয়াংকিনের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবেন।

নিউ জার্সিতে শেরিল রিপাবলিকান প্রার্থী জ্যাক সিয়াটেরিলিকে পরাজিত করেছেন। তিনি দায়িত্ব বুঝে নেবেনে অঙ্গরাজ্যটির ডেমোক্র্যাট গভর্নর ফিল মারফির কাছ থেকে।

নিজ দলের প্রার্থীদের এসব বিজয়ের পর এক্স এ এক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতা হাকিম জেফ্রিস আশাবাদ উচ্চারণ করে বলেছেন, “ডেমোক্র্যাটিক পার্টি আবার ফিরে এসেছে।”