ক্যারিবীয় অঞ্চলে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’। শক্তিশালী এই ঝড়ে জ্যামাইকা, কিউবা ও হাইতিতে অন্তত ৫০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা অ্যাকুওয়েদার।
সংস্থাটির তথ্যমতে, ঝড়টি ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনেছিল—যা আটলান্টিক অঞ্চলে রেকর্ড করা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গতির ঝড়।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) ঘূর্ণিঝড় বিশেষজ্ঞ অ্যান-ক্লেয়ার ফন্টান জানিয়েছেন, “জ্যামাইকার জন্য এটি ছিল শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড়—এতো প্রবল আঘাত দেশটি আগে কখনও সহ্য করেনি।”
গত ২৮ অক্টোবর ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার ঝড় হিসেবে ‘মেলিসা’ জ্যামাইকার দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানে। ১৯৮৮ সালের পর এটিই দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
ঝড়ে হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার পরিবার। সরকারি হিসেবে, ১৯ জন নিহত হয়েছেন এবং শতাধিক মানুষ আহত।
অন্যদিকে প্রতিবেশী হাইতিতে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু ও ২০ জনের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুধু দক্ষিণাঞ্চলের পেটি-গোয়ে এলাকায় নদী উপচে পড়ে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ১০ জন শিশু।
জ্যামাইকা ও হাইতিতে তাণ্ডব চালিয়ে ঝড়টি ক্যাটাগরি–৩ মাত্রায় দুর্বল হয়ে কিউবায় প্রবেশ করে। সেখানে বড় ধরনের প্রাণহানি না হলেও ৭ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হয়, এবং বহু ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ধ্বংস হয়।
অ্যাকুওয়েদারের হিসাবে, ক্যারিবীয় অঞ্চলে মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধু জ্যামাইকাতেই ক্ষতি হয়েছে ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) ক্যারিবীয় পরিচালক ব্রায়ান বোগার্ট বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর অবস্থা একেবারেই ভয়াবহ—খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের সংকটে লাখো মানুষ।”
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘মেলিসা’ এবারের মৌসুমের চতুর্থ ঘূর্ণিঝড়, যা ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে প্রবল শক্তি অর্জন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘূর্ণিঝড়গুলোকে আরও দ্রুত ও ধ্বংসাত্মক করে তুলছে—যা জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রতিফলন।
সূত্র: রয়টার্স, শাফাক নিউজ।