বন্ধকী সম্পত্তির চুক্তি জালিয়াতির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর লিসা কুককে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শিগগিরই তাকে অপসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের যুদ্ধ আরও তীব্র আকার ধারণ করলো।

মিজ কুক ফেডারেল রিজার্ভের 'বোর্ড অব গভর্নরসে'র সাত সদস্যের একজন। ব্যাংকটির ইতিহাসে তিনিই প্রথম আফ্রিকান বংশাদ্ভূত নারী, যিনি গুরুত্বপূর্ণ এমন পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ২০২২ সালে তাকে পদটিদে নিয়োগ দিয়েছিল।

কিন্তু চলতি বছর ট্রাম্প দেশটির ক্ষমতায় বসার পর থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিলো যে, মিজ কুককে বরখাস্ত করা হতে পারে।

এর মধ্যেই সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে করা একটি পোস্টে ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর মিজ কুককে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি প্রকাশ করেছেন, যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

চিঠিতে মিজ কুকের বিরুদ্ধে বন্ধকী চুক্তিতে জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। চুক্তিতে তিনি যে 'মিথ্যা বিবৃতি' দিয়েছেন, সেটা বিশ্বাস করার "যথেষ্ট কারণ" রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প।

এরপর সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে মিজ কুককে অপসারণের অনুমতি দিয়েছেন তিনি।

ফেডারেল রিজার্ভের ১১১ বছরের ইতিহাসে একজন গভর্নরকে এভাবে বরখাস্ত করার ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি বলে জানা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মিজ কুক কিংবা ফেডারেল রিজার্ভ, কেউই কোনো মন্তব্য করেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনিচ্ছা দেখানো সত্ত্বেও সুদের হার কমানোর ব্যাপারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিষ্ঠানটির ওপর, বিশেষ করে চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের ওপর, ধারাবাহিকভাবে চাপ বাড়াচ্ছিলেন ট্রাম্প।

এমনকি পাওয়ালকেও বেশ কয়েকবার বরখাস্ত করার হুমকি দিতে দেখা গেছে তাকে। এবার গভর্নর লিসা কুককে অপসারণের মধ্য দিয়ে ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তীব্র করার বার্তা দিলেন ট্রাম্প।

তবে মিজ কুককে যেভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে, সেটির বৈধতা নিয়ে আগামীতে আইনি প্রশ্ন উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আদালত পর্যন্ত গড়ালে ট্রাম্প প্রশাসনকে কুকের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ প্রমাণ করতে হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।

ট্রাম্পের চিঠি অনুসারে, মিজ কুক এমন একটি নথিতে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে মিশিগানের একটি বাড়ি আগামী বছরের জন্য তার বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

"এ ঘটনার দুই সপ্তাহ পরে আপনি (কুক) জর্জিয়ার আরেকটি সম্পত্তির নথিতে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে সেটি আগামী বছরের জন্য আপনার প্রাথমিক বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে," সামাজিক মাধ্যমে পোস্টে লিখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

"এটা মেনে নেওয়া কঠিন যে, দ্বিতীয় সম্পত্তির নথিতে স্বাক্ষর করার সময় আপনি প্রথমটির বিষয়ে অবগত ছিলেন না," বলেন ট্রাম্প।

বন্ধকী সম্পত্তির চুক্তিতে জালিয়াতির এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে তিনি মিজ কুককে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

জালিয়াতির বিষয়টি প্রথমবার জানা গিয়েছিল গৃহ অর্থায়ন নিরীক্ষক বিল পুল্টের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে লেখা একটি চিঠি থেকে।

পরে বিষয়টি তদন্তের জন্য বিচার বিভাগকে আহ্বান জানানো হয়। তবে তদন্ত শুরু হয়েছে কি-না, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।

গত সপ্তাহে বিবিসিকে পাঠানো এক বিবৃতিতে মিজ কুক জানিয়েছিলেন যে, তিনি গণমাধ্যমের খবর থেকে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো বিষয়ে জানতে পেরেছেন।

যে বন্ধকী ঋণের আবেদনের কথা উল্লেখ করে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগদানের চার বছর আগে করেছিলেন বলেও জানান কুক।

"সামাজিক মাধ্যমে তোলা কিছু প্রশ্নের কারণে আমার পদত্যাগ করার কোনো ইচ্ছা এখন পর্যন্ত আমার নেই," বিবৃতিতে বলেছিলেন লিসা কুক।

অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেবেন বলেও তখন জানান যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম এই গভর্নর।

"ফেডারেল রিজার্ভের সদস্য হিসেবে আমার আর্থিক ইতিহাস সম্পর্কে ওঠা যেকোনো প্রশ্নকে আমি গুরুত্ব সহকারে নিতে চাই। সেজন্য অভিযোগের জবাব দিতে আমি তথ্য সংগ্রহ করছি," বলেন মিজ কুক।

তাকে বরখাস্ত করার যে সিদ্ধান্ত ট্রাম্প নিয়েছেন, কুক কিংবা ফেডারেল রিজার্ভ যদি সেটির বিরোধিতা করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং হোয়াইট হাউসের মধ্যে এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৯৫১ সালের ঘোষণা অনুযায়ী, ফেডারেল রিজার্ভ একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিষ্ঠানটি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে পারে, যেমনটি দেখা গেছে সুদের হার কমানোর জন্য ট্রাম্পের আহ্বানের ক্ষেত্রে।

সুদের হার কমানোর ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাতে সাড়া না দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে "একগুঁয়ে নির্বোধ" বলে অভিহিত করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কিন্তু গত সপ্তাহে মি. পাওয়েলের কণ্ঠে কিছুটা নমনীয়ভাব দেখা গেছে। আগামী সেপ্টেম্বরে সুদের হার কিছুটা কমতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

এমনকি জ্যাকসন হোলের ওয়াইমিংয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সভায় তাকে এমন যুক্তিও তুলে ধরতে দেখা গেছে যে, ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক ঘোষণার ফলে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব বেশিদিন স্থায়ী নাও হতে পারে।

সোর্স: বিবিসি বাংলা