ইন্দোনেশিয়ায় সংসদ সদস্যদের জন্য উচ্চ ভাতার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন সহিংস রূপ নিয়েছে। রাজধানী জাকার্তাসহ বিভিন্ন প্রদেশে ছড়িয়ে পড়া এ আন্দোলন দেশজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার তথ্যে জানা যায়, সংসদ সদস্যদের জন্য অনুমোদিত মাসিক আবাসন ভাতা দেশের ন্যূনতম মজুরির তুলনায় ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। এ খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ।

পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন রাজধানীতে পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় এক ফুড ডেলিভারি কর্মী আফফান নিহত হন। বিক্ষোভে অংশ না নিয়েও শুধুমাত্র খাবার সরবরাহ করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। তার মৃত্যু জনরোষকে নতুন মাত্রা দেয় এবং বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সদর দপ্তরে হামলা চালায়।

প্রতিবাদকারীরা শুধু বাড়তি ভাতার বিরুদ্ধেই নয়; বরং দুর্নীতি, বৈষম্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। নারীবাদী কর্মীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দমনের অভিযোগ তুলেছেন।

দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাবোও নির্বাচনের আগে প্রবৃদ্ধি ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও বর্তমানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো খাতে বড় ধরনের কাটছাঁট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জনপ্রিয়তা কমলেও এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সুযোগ আছে। দুর্নীতি দমন ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে পারলেই জনআস্থা কিছুটা ফিরতে পারে।

চাপে পড়ে সংসদ ইতোমধ্যেই আবাসন ভাতা বাতিল, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত এবং অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে এতে পরিস্থিতি শান্ত হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

বিক্ষোভে উত্তাল এ অবস্থা অনেকের মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৯৮ সালের আন্দোলনের কথা, যখন সহিংসতার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের শাসক সুহার্তোর পতন ঘটে। তবে এবার সে রকম পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

বর্তমান অস্থিরতার মাঝে প্রেসিডেন্ট প্রাবোওর কর্তৃত্ব আরও জোরদার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, তিনি এই পরিস্থিতিকে সামরিক আইন জারির অজুহাত হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। ফলে সংকট কাটলেও সমালোচক ও বিরোধীদের ওপর কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঝুঁকি রয়ে গেছে।

ইন্দোনেশিয়ার সামনে তাই এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।